IMG 20220719 022203

জেমস ওয়েব ও হাবল স্পেস টেলিস্কোপ

>> আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ

জেমস ওয়েব এর প্রথম ছবিটা (সব নক্ষত্রের ক্লাস্টারের ছবি) আমার কাছে খুবই অদ্ভুত সুন্দর মনে হয়। ভাল ভাবে খেয়াল করলে বুঝা যাবে ছবিটি ঠিক সমতল মনে হচ্ছে না। কোন নক্ষত্র গুচ্ছ অনেকটা বড় করে দেখানো, অনেকটা ম্যাগ্নিফায়িং গ্লাসের নিচে রাখার মত। এইভাবে ছবি বিকৃত (distorted) হওয়ার কারণ জেমস ওয়েব যন্ত্রাংশ না, বরং নক্ষত্র গুচ্ছের (ক্লাস্টার) শক্তিশালী মাহাকর্ষ বল। আইনস্টাইনের মতে মাহাকর্ষ বল আলো কে সরল পথ থেকে বাঁকিয়ে নিতে পারে। ব্ল্যাক হোল একি কারণে আলো বাঁকা করতে পারে। আলো এইসব নক্ষত্র গুচ্ছের পিছন থেকে সরাসরি সরল রেখা বরাবর আমাদের সৌরজগতে এসে পোঁছাতে পারে না, যে কারণে আমরা অনেক ভর সহ নক্ষত্র গুচ্ছের পিছনের আলো একটু বাঁকা দেখি।
FB IMG 1658175433098
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে তোলা মহাবিশ্বের সাড়ে চার মিলিয়ন বছর আগের ছবি | ছবি: নাসা
জেমস ওয়েব এর প্রথম ছবিটির অনেক সংবাদপত্রে ও লেখা দেখেছি ১৩ বিলিয়ন বছর আগের ছবি। আসলে ছবিটিতে বর্তমানে তোলা (নিয়ার ইনফ্রারেড ক্যামেরা ও মিড-ইনফ্রারেড যন্ত্রাংশের ডাটা প্রসেসিং) বিভিন্ন গ্যালাক্সির সময়ের অবস্তা দেখতে পাচ্ছি আমরা। ছবির সব নক্ষত্রের ক্লাস্টার (অনেকগুলো নক্ষত্র জটবাধা) একই দূরত্বে না থাকায় সবগুলো থেকে আলো একই সাথে এসে আমাদের সৌরজগতে পোঁছাবে না এটাই স্বাভাবিক। একি ছবির মধ্যে ছোট একটা লাল বিন্ধুর মত নক্ষত্রের ক্লাস্টার আমাদের থেকে ১৩.১ বিলিয়ন আলোক দূরত্বে, যা থেকে আলো এসে পোঁছাতে ১৩.১ বিলিয়ন বছর লাগে। আবার একই ছবির মধ্যে আরেকটা নক্ষত্রের ক্লাস্টার থেকে আলো আসতে লাগে ৪.৫ বিলিয়ন বছর। তাই ছবিটির সব গ্যালাক্সি যে ১৩ বিলিয়ন বছর আগের অবস্তায় আমরা দেখতে পাচ্ছি তা ঠিক না। আমরা গ্যালাক্সি/নক্ষত্রের অনেক অতীত অবস্তা দেখতে পারছি জিনিসটা যেমন আমার কাছে অনেকটা বিস্ময়কর, আমরা এদের তাৎক্ষনিক (বর্তমান) অবস্তা কখনওই জানতে পারব না এটা ও অনেক মজার।
আমরা এইসব নক্ষত্রের অনেক আগের ছবি দেখতে পারলেও, আমরা যদি এখন চাই আমাদের অতীত দেখতে তা এত সহজ হবে না। ধরা যাক ২০০ মিলিয়ন বছর আগের ডাইনোসর দেখতে চাই আমরা। তাহলে আমাদের এখন আলোর গতি (৩x১০^৮ মিটার/সেকেন্ড) থেকে বেশি (!) গতিতে যেতে হবে ⇒ ২০০ x ১০^৬ (মিলিয়ন বছর) x ৩x১০^৭ (সেকেন্ড একবছরে) x ৩x১০^৮ (মিটার/সেকেন্ড আলোর গতি) / ১০০০ (মিটার থেকে কিলোমিটার) = ১৮ x ১০^২০ কিলোমিটার দূরত্ব (এপ্রক্সিমেটলি)। পদার্থ বিজ্ঞানে আলবার্ট আইনস্টাইনের স্পেশাল রিলেটিভিটিতে কখনই আলোর গতিতে যাওয়া সম্ভব না। তাই আমাদের নিজেদের অতীত এভাবে দেখাও সম্ভব না।
অনলাইনে এরই মধ্যে অনেক ভাল ভিডিও বের হয়েছে জেমস ওয়েব এর ছবি নিয়ে। আরও জানার আগ্রহ থাকলে আমি নাসার অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল সাজেস্ট করব।
Astrophysics for People in a Hurry, Book by Neil deGrasse Tyson আরেকটি সাধারণ অডিয়েন্স এর জন্য লেখা বই যা আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে।
সবার মনে হয় অনেক আগেই দেখা হয়ে গেছে Cosmos: A SpaceTime Odyssey টিভি সিরিজ। তারপরও বলব আবার দেখার জন্যে। এক কথায় মনমুগ্ধকর।
হাবল টেলিস্কোপের কন্ট্রোল সেন্টারের ছবি গুলো দেয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। ছবি গুলো ৩ মাস আগে তোলা নাসার গড্ডার্ড ফ্লাইট সেন্টারে। হাবল টেলিস্কোপের কন্ট্রোল সেন্টারের একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রথম দিকে ২৪ ঘণ্টা অনেক ইঞ্জিনিয়ার আর বিজ্ঞানীরা একসাথে অবিচ্ছিন্ন ভাবে হাবল টেলিস্কোপের দেখাশোনা করতেন। ২০১১ এর দিকে বেশিরভাগ জিনিশ কম্পিউটার মনিটরড করে ফেলা হয়। এখন মাত্র কয়েকজন হাবল টেলিস্কোপের কন্ট্রোল সেন্টারের বসেন। জেমস ওয়েবের কন্ট্রোল সেন্টার হচ্ছে স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইন্সিটিউট, ম্যারিল্যান্ড, যার মধ্যে নাসার গড্ডার্ড ফ্লাইট সেন্টার, ম্যারিল্যান্ড ডাটা রিসিভ করে পাঠায়।
জেমস ওয়েবের ছবি থেকে আমাদের অনেক কিছুই উপলব্ধি করার আছে। কার্ল সেগান থাকলে আজকে কি বলতেন? জেমস ওয়েবে ডাটা থেকে আরও মনোমুগ্ধকর তথ্য ও ছবি দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

লেখক: আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ
পিএইচডি, ক্লাইমেট ফিজিসিস্ট
নাসা গড্ডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার
ম্যারিল্যান্ড, ইউএসএ

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।