Kerani Ganj jpg

কেরানীগঞ্জ, ঢাকা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক অঞ্চল। ১৬৬.৮৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তন জুড়ে ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কেরনীগঞ্জ উপজেলার প্রশাসনিক দিক বিবেচনা করে ২০০৫ সালে ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে দ্বিতীয় আরেকটি থানা স্থাপিত হয়, যা দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা নামে প্রতিষ্ঠিত। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে থানা প্রশাসনের অফিস ছিল ঢাকার এস.ডি.ও অফিসের নিকট ছোট্ট একটি কক্ষে। তারপর থানা প্রশাসনের অফিস চলে আসে জিনজিরায় চেয়ারম্যান আলীমুদ্দিন সাহেবের বাড়ীর ভাড়া করা একটি কামরায়। সেখান থেকেই কেরানীগঞ্জ থানা প্রশাসনের কর্মকান্ড পরিচালিত হতো। অতপর ১৯৮৩ সালে  বিকেন্দ্রীভূত প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হলে কেরাণীগঞ্চ থানা অঞ্চল উপজেলার স্বীকৃতি লাভ করে এবং একটি থানার প্রশাসনের মাধ্যমেই সমগ্র উপজেলার আইন-শৃংখলা নিয়ন্ত্রণ হতে থাকে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্মৃদ্ধি ও মানুষের সহজতর আইনি সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০০৫ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের কোল ঘেষে নতুন থানা স্থাপনের মাধ্যমে নতুন একটি প্রশাসনিক থানা অঞ্চল গঠিত হয়। যা দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা ও ঢাকা জেলার একটি বিশেষ থানা অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে আবস্থিত দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা অঞ্চলটি বর্তমানে একটি ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্মৃদ্ধ এলাকা। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে নৌকা যোগে পাড় হয়ে ওপাড়ে গেলেই একটু পশ্চিমে দেখা মিলবে বুড়িগঙ্গার দক্ষিণ তীরে অবস্থিত দেশের সুনাম খ্যাত কালীগঞ্জ কাপড় মার্কেট। রঙ বে-রঙের বাহারী বা ছেলে-মেয়েদের সব ধরনের পোষাকের এক অন্যরকম ব্যবসাকেন্দ্র হয়ে সুনাম ধরে রেখেছে এই দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা অঞ্চল।

 

এশিয়া বিখ্যাত ফুড কোম্পানি, কলকারখানা, একাধিক ঔষধ ফ্যাক্টরী, অটো রাইস মিল, রাইস মিল, ইট ভাটা, বিস্কুট ফ্যাক্টরী, সিনেমা হল , ফিলিং স্টেশন, ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান, কুটির শিল্প কারখানা, বালির ব্যবসা কেন্দ্র, গ্যাস ডিপো, পাওয়ার প্ল্যান্ট , ডকইয়ার্ড ও দেশের একমাত্র বিটুমিন কারখানা এই দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জেই অবস্থিত। বুড়িগঙ্গা ও ধালেশ্বরী নদী বিধৌত দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা অঞ্চলের উপর দিয়ে চলমান রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের বহুল প্রশংসিত উন্নয়নের গতিধারার রূপ রেখা ঢাকা মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে।

এই এক্সপ্রেস ওয়ে ধরেই বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে পদ্মার দুই পাড়ের কোটি মানুষ। উল্লেখ্য, দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা অঞ্চলের উপর দিয়ে নির্মিত হচ্ছে ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন হতে পদ্মা রেল সংযোগ লাইন। এখানেই অবস্থিত হয়েছে চায়নার পদ্মা ব্রিজ রেল লিঙ্ক প্রজেক্ট। পদ্মা সেতুর উদ্ভোধন এর পর এবার এই রেল সংযোগ চালু হলে পাল্টে যাবে রাজধানীসহ কেরাণীগঞ্জ এর যোগাযোগ প্রেক্ষাপট। এখানে অবস্থিত ছোট বড় অসংখ্যা ভবনের ফাঁকে প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা খেলার মাঠ, প্রিয় প্রাঙ্গণ আবাসিক এলাকা, বসুন্ধরা রিভার ভিউ আবাসিক এলাকা উপজেলাকে আরও এক ঝলক আলোকিত করেছে।

এ অঞ্চলের গ্রাম-পল্লীর সৌন্দর্য যেকোন পর্যটকের চক্ষু শীতল করবে। পল্লী অঞ্চলের মানুষ স্বাধারণত কৃষি কেন্দ্রিক জীবন নির্ভাহ করলেও কিছু অংশ অন্যান্য পেশার সাথেও জরিত রয়েছে।  খাল-বিল ও নদীর চড়গুলো ভীষণ মায়ময়। বিকেল হলে ধালেশ্বরী নদীর সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পায়। নদীর কুল থেকে ধালেশ্বরী ব্রীজ দুটি দেখতেই এক অন্য অনুভূতি আকর্ষিত হয়।

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেস ওয়ে ধরে ধলেশ্বরী নদী পাড়ি দিতে এই ব্রীজ দুটি খুবই গুরত্ব বহণ করে। একদিকে ধলেশ্বরী ব্রীজ অন্যদিকে রাজধানী ঢাকার সাথে সংযুক্ত বুড়িগঙ্গা নদীর উপর নির্মিত বাবু বাজার ব্রিজ ও পোস্তগলা ব্রিজ দুটি কেরাণীগঞ্জ এর বহিরাগমন ও আগমন পথকে সহজ করে তুলেছে। আবার বুড়িগঙ্গা নদীতে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকার মাধ্যমে প্রতিদিন হাজার-হাজার মানুষের পাড়াপাড়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ অঞ্চলের যোগাযোগে ব্যপক প্রভাব রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অঞ্চলের কিছু মানুষের জীবন নির্বাহ হয়ে উঠেছে এই নৌকা পাড়াপাড়। তবে এ অঞ্চলে ব্যবসাকেন্দ্রের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে অসংখ্যা লোকাল গার্মেন্টস ইন্ড্রাস্ট্রি। আর এ শিল্পের সাথে জড়িয়ে রয়েছে বহিরাগত প্রায় ১৫ লক্ষাধিক শ্রমিক।

স্থানীয় ও বহিরাগত মিলিয়ে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের বসবাস স্থল দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা এলাকার আবহাওয়া কখনো উঞ্চ আবার কখনো শীতল। তাই অঞ্চলের মানুষের চিকি’সা সেবায় গড়ে উঠেছে অসংখ্যা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। তবে উপজেলার একমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি কেরাণীগঞ্জ মডেল থানা অঞ্চলের আওতাধীন রয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষার আলোতে বেড়ে ওঠার জন্য এখানে বিশেষায়িত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকলেও বিভিন্ন মাধ্যমের শতাধিক শিক্ষালয় প্রতি বছরই সাফল্যের সাথে শিক্ষার মান সমুন্নত রাখছে।

প্রায় সব দিক থেকে সমৃদ্ধ এ অঞ্চলের পানগাঁওয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বিকাশের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে নির্মিত হয়েছে অভ্যান্তরিন কন্টেইনার টার্মিনাল (আই,সি,টি)। যা দেশের অর্থনৈতিক সম্মৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য মাইল ফলক। তাছাড়াও দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ এলাকাটি পর্যটকদের জন্য একটি বিশেষ অঞ্চল। জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা বা ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়া দেড়শ বছরের পুরনো দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদ দেশের ইতিহাসে এক অন্যতম পুরাকৃর্তি।

রাজেন্দ্রপুর সাউথ টাউন এলাকায় অবস্থিত একটা নান্দনিক, নয়াভিরাম সুদৃশ্য সাউথ টাউন জামে মসজিদ টি বর্তমান সময়ে নির্মিত সবচেয়ে আলাদা বৈশিষ্টের একটি মসজিদ। যা তৈরি করতে সময় লেগেছে প্রায় দুই বছর। একতলা এই মসজিদের নান্দনিক দৃশ্য দেখার জন্য দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসে প্রতিদিন। তাছাড়াও দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের কদম আলী মাস্তানের দরবার শরিফ পর্যটকদের আরেকটি নান্দনিক স্থান। এ অবস্থিত রয়েছে ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগার, আঞ্চলিক পাসপোর্ট ভবন-যাত্রাবাড়ি, ঢাকা সান সিটি (গোল্ডেন পার্ক), ধলেশ্বরী আর্মি ক্যাম্প ও আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়নের পুলিশ লাইন

কেরাণীগঞ্জের কদমতলী মোড়টি উপজেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এখান থেকেই বিভাজন হয়েছে সড়কের গতিপথ। নানা কারণে গুরুত্ব পাওয়া এ অঞ্চল কখনো কখনো বিষন্নতায় ঢেকে যায়। মাদক, চিনতাই, হত্যা, আত্মহত্যা, বা সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতা থেকে এ অঞ্চলটিও বাদ পড়েনি। তবে এসব অপরাধ প্রবণতাকে রুখতে ঢাকা মাওয়া মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার সদস্যগণ সর্বদাই কাজ করছেন।

এ থানা অঞ্চলের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গত ২১ মে ২০২২ এ পদায়িত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার সফল ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজামান।

যেতুহু ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, অভ্যান্তরিন কন্টেইনার টার্মিনাল (আই,সি,টি) এর অবস্থান এই এই দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জে তাই মোহাম্মদ শাহজামান এর রয়েছে এক বিশাল প্রশিক্ষিত পুলিশ ইউনিট। প্রায় পৌনে তিনশত পুলিশের অভিভাবক হয়ে তিনি অত্র অঞ্চলের প্রতিটি মানুষের জন্য পুলিশি সেবার দুয়ারে অভয়তার ঘোষনা দিয়েছেন এ থানায় যোগদানের সুচনা লগ্নেই। তার অভয়দানে সেবা প্রার্থীরাও নির্ভয়ে কোনরূপ দালাল চক্র ছাড়াই তাদের প্রাপ্য সেবা গ্রহণ করছেন। তবে স্থানীয় কিছু অপরাধী তাদের অপরাধ চক্রকে সংঘবদ্ধ করার চেষ্টা এখনো চালাচ্ছে অফিসার ইনচার্জ  মোহাম্মদ শাহজামান উল্লেখ করেন সেইসব অপরাধী চক্রের দ্বারা ঘটমান অপরাধ গুলো সম্পর্কে।

অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে কার্যকরি পদক্ষেপ এর পাশাপাশি তিনি দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা অঞ্চলের বিশেষায়িত গুরুত্ব সম্পর্কেও কিছু বিষয় উল্লেখ করেন। শাহজামান এ থানায় যোগদান করে জনসাধারনের সামাজিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কি ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন এসম্পর্কেও কিছু তথ্য শেয়ার করেন চ্যানেল আই পজিটিভ থিংক এর ক্যামেরায়।

দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা অঞ্চল যেহুতু প্রায় ২০ লক্ষ্য মানুষের আবাস স্থল সেহুতু এখানে বিবিধ কারণে অপমৃতুর সংখ্যা একটি বেশিই পরিলক্ষিত হয়। যার পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা দেন শাহজামান। দেশের সর্ব প্রশংসিত এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়েসহ এখানকার আঞ্চলিক সড়কগুলো ক্রমশ সড়ক দুর্ঘটনা ছোবলে ভয়াবহ হয়ে উঠছে এ সম্পর্কেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেন  শাহজামান।

সাময়িক আনন্দে উচ্চ ও অধিক গতিতে গাড়ি চালিয়ে জীবনের অবসান না ঘটিয়ে অফিসার ইনচোর্জের এই নিবেদন গ্রহণ করাই হবে সফলতা।  তিনি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানের নানান উদ্যোগের সফলতা উল্লেখ করে বলেন, খুব শীঘ্রই কেরাণীগঞ্জ দক্ষিণ থানা অঞ্চল হবে একটি অপরাধমুক্ত থানা অঞ্চল। তাছাড়াও তিনি অঞ্চলের মানুষের জন্য সবুজ সংকেত-এর মাধ্যমে সকলকে নির্ভরতার এক মহা আশ্বাস ব্যক্ত করেন।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।