Nandail Sobuj Songket Thumbnail jpg

নান্দাইল উপজেলা, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত একটি প্রশাসনিক এলাকা। এটি জেলার সর্ব দক্ষিণ ও পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত ৩২ কি.মি দৈর্ঘ্য বিশিষ্ঠ একটি উপজেলা যার মোট আয়তন ৩২৬.১৩ বর্গকিমি।

১৯১২ সালের ২ জানুয়ারি প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে নান্দাইল থানার গোড়াপত্তন ঘটে। এবং ঐ মাসের ১৮তারিখে সরকারি গেজেট ভুক্ত হয়। অতপর স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে ১৯৮২ সালের ১৫ ডিসেম্বর নান্দাইল থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। এবং ১৯৯৭ সালে শহর কেন্দ্রিক ২৩ বর্গ কি.মি. সীমানার ৯টি ওয়ার্ডকে পৌরসভা হিসেবে ঘোষনা করা হয়। যা নান্দাইল পৌরসভা নামে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে নান্দাইল উপজেলা গঠিত রয়েছে। যা মোট ১৬৩টি মৌজা ও ২৬৫টি গ্রামে বিভক্ত রয়েছে। উল্লেখ্য যে, সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম নান্দাইল মডেল থানার আওতাধীন রয়েছে।

 

 

নান্দাইল এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে জানা যায়, নন্দদুলাল নামের এক জমিদার তার জমিদারি সীমানাকে চিহ্নিত করেছিলেন আইল তৈরির মাধ্যমে। সেই নন্দদুলাল জমিদারের আইলের সংক্ষিপ্ত রূপ লোকমুখে বিভিন্ন ভাবে উচ্চারিত হতে হতে একসময় নান্দাইল শব্দে পরিণত হয়। তৎকালিন বঙ্গদেশের কাছে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছিলো। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে এ উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর পূর্ব বাংলার অন্যতম প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। তাছাড়া পাকিস্তান আমলেও নান্দাইল এলাকা রাজনৈতিক সরগরম ছিলো। ১৯৫৪ সালের নির্বাচন উপলক্ষে শেখ মুজিবুর রহমান, আবদুল হামিদ খান ভাসানী, এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী খালেক নওয়াজের পক্ষে নান্দাইল আসেন। তাছাড়া ১৯৭০ সালের মে মাসে সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে শেখ মুজিবুর রহমান পুনরায় নান্দাইল আসেন এবং নান্দাইল শহরের চণ্ডীপাশা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উদ্দিপ্ত বক্তব্য দেন। কালের বিবর্তনে নান্দাইলের রাজনৈতিক পরিবেশ পরিবর্তন হলেও নান্দাইল এখনো স্বগৌরবেই প্রতিষ্ঠিত আছে।

নান্দাইল  উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নে রয়েছে ৫শত বছরের প্রাচীন মোয়াজ্জমাবাদ মসজিদ। যা ইসলামী ঐতিহ্যের নিদর্শনে নান্দাইলকে প্রত্নতাত্বিক অঞ্চল হিসেবে নির্বাচন করেছে। নান্দাইল উপজেলার বারপাড়া এলাকায় রয়েছে শতশত বছরের আরেকটি মুসলিম ঐতিহ্যের নিদর্শন নগর কচুরী গায়েবী মসজিদ। সৈয়দগাঁও এলাকায় রয়েছে বুড়া পীর সাহেবের মাজার এবং জাহাঙ্গীরপুর গ্রামে রয়েছে তাপস জাহাঙ্গীর শাহ নামে আরেকটি মাজার ও খানকা।

অন্যদিকে নান্দাইলের চন্ডীপাশা ইউনিয়নের বারুইগ্রাম ও মুশুল্লী ইউনিয়নের কালীগঞ্জ রেল সেতু গনকবর দুটি নান্দাইলের ইতিহাসের পাতায় জেগে থাকবে চিরোকাল। তবে দুটি বদ্ধভুমিই অরক্ষিত রয়ে গেছে। নির্মাণ করা হয়নি কোন ধরনের স্মৃতিস্তম্ভ। ফলে ১৯৭১-এ পাক-বাহিনীর হাতে নৃশংসভাবে বহু বাঙালির শহীদ হওয়ার ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে অজানাই রয়ে যাচ্ছে। যা মোটেও কাঙ্খিত নয়।

নান্দাইল উপজেলা, বীর প্রতিক খেতাবপ্রাপ্ত আনিসুল হক আকন্দ, গাজী আবদুস সালাম ভূঁইয়া ও আবদুল জব্বার এর জন্মভুমি। এ উপজেলা নজরুল গবেষক করুণাময় গোস্বামী, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আন্দোলনের নেত্রী সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া, অগ্নিকন্যাখ্যাত ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব ক্ষীরোদাসুন্দরী চৌধুরী, ভাষা সৈনিক, রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক খালেক নওয়াজ খান এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত , সাবেক রিয়ার এডমিরাল বাংলাদেশ নেভাল কাজী সারোয়ার হোসাইন এবং পাকিস্তানের উপরাষ্ট্রপতি, পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন এর জন্মভুমি। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে নান্দাইলের সাহসী সন্তানদের রয়েছে দীপ্তময় ভূমিকা। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, ৫২’এর ভাষা আন্দোলন,  ৬৯’এর গণঅভ্যুত্থান ও ৭১’ এর মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি আন্দোলন ও সংগ্রামে তাঁদের অবদান মানুষের হৃদয়ে রয়েছে চির অম্লান।

 

নান্দাইল নরসুন্দা ও ব্রহ্মপুত্র নদী বিধৌত ঊর্বর মাটি সমৃদ্ধ ৩২৬.৩৭ বর্গ কিলোমিটার সীমানার একটি অপরুপ শ্বাশতপল্লী জনপদ। বাংলার রূপ ফুটিয়ে তোলার অধিকাংশ উপাদানই রয়েছে এ অঞ্চলে। ফসলের অবারিত মাঠ, শাপলা শালুকের বিল, কাশবন, নদীবক্ষে বহমান নৌকা, দোয়েল শ্যামা, কোকিলের অবাধ বিতরণ এখানে দৃশ্যমান। এ অঞ্চলের মানুষের সহজ সড়ল জীবন যাপন ও শিশুদের খেলার ছলে বিবিধ কাজের নেশা সত্ত্যিই প্রশংসনীয়।

 

নান্দাইল উপজেলা ময়মনসিংহ-৯ নির্বাচনি এলাকার অন্তভূক্ত একটি সম্মৃদ্ধশালী জনপদ। কালের পথ পরিক্রমায় এ এলাকার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। উপজেলা পরিষদের সামনে নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু চত্ত্বর। তাছাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, উপজেলা পরিষদের নতুন প্রশাসনিক ভবন ও হল রুম, জাতীয় চারনেতা স্মৃতি স্তম্ভ, নান্দাইল চৌরাস্তা ও কানুরামপুরে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্তম্ভ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন, নান্দাইল সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয় নির্মাণ, নান্দাইল উপজেলা কৃষকসেন্টার নির্মাণ, নান্দাইল উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর কার্যালয় নির্মাণ, ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নান্দাইল সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ নির্মাণ, নান্দাইল মডেল থানায় চারতলা ভবন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ৫ টি কলেজে ও ১ টি স্কুল এন্ড কলেজে চারতলা নতুন আইসিটি ভবন নির্মাণ, ৩০ টি কমিউনিটি ক্লিনিক পূণঃনির্মাণ, নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ৫ টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র মেরামত ও সংস্কারসহ অসংখ্য স্থাপনাগুলো হালে এসে উন্নয়নে বদলেছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও লেগেছে ব্যাপক উন্নয়নের ছোয়া। গ্রামীন রাস্তাগুলো পাকা হয়েছে। বিশেষ করে ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে কানুরামপুর -মধুপুর – বালিপাড়া – ত্রিশাল মহাসড়ক নির্মাণের ফলে নান্দাইলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। যার সুফল কুড়াচ্ছে নান্দাইলে স্থায়ী বসবাসরত প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মানুষ। মহাসড়কে হাইওেয়ে পুলিশের দায়িত্বের পাশাশি থানা নান্দাইল মডেল থানা পুলিশের অংশগ্রহণ এবং অঞ্চলের যান চলাচল ব্যবস্তা সম্পর্কেও আলোচনা করেন অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান।

তিনি বলেন মহাসড়কের পাশাপাশি নান্দাইলের আঞ্চলিক সড়কগুলোতে ছোট যানবাহনের চাপ একটু বেশি থাকে। বিশেষ করে মটরসাইকেল ও স্থানীয় ব্যচারিচালিত অটো বাহনের চলাচল বেশি। সঠিক প্রশিক্ষণ না থাকায় কখনো কখনো তারা দুর্ঘটনার শিকার হয় এবং নিহতের মত ঘটনা ঘটে।

অন্যদিকে নান্দাইলে বসবাসরত মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। যা নিয়ন্ত্রণে ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞার নির্দেশে নান্দাইল মডেল থানা পুলিশ নানা সচেতনতামুলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সেই সাথে এসব অপমৃত্যুর রহস্য উদঘাটনেও সফল হয়েছে নান্দাইল মডেল থানা পুলিশ।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।