Sobuj Sonket Tarakanda Thana

দেশের মধ্যাঞ্চল ময়মনসিংহ জেলা শহর থেকে মাত্র ১৫ কি.মি. উত্তরে রাংসা নদীর তীরে অবস্থিত একটি উপজেলা শহর যার নাম তারাকান্দা। এটি ময়মনসিংহ জেলার সর্বশেষ গঠিত একটি উপজেলা। উপজেলাটি ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারী প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে এটি ফুলপুর উপজেলার অধীন একটি থানা ছিল যা ১৯ মে, ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

উপজেলাটি প্রতিষ্ঠার দিকে নতুন হলেও এটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি জনপদ। কেননা এখানে রয়েছে কৃষি ও মৎস্যের অভাবনীয় সম্ভাবনা। অন্যদিকে এটি জেলার একটি ঐহিত্যবাহী ও প্রাচীণ জনপদ।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ষষ্ঠথেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে এখানে মানুষের বসবাস বাড়তে থাকে এবং সে সময় তারাকান্দায় একটি সভ্যতা গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে তারাকান্দা একটি ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়। সেকালের তারাকান্দা আর বর্তমান তারাকান্দার মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। এখন তারাকান্দা কোন জনবিচ্ছিন্ন নগর নয়! যোগাযোগ, শিক্ষা, অর্থনীতি, স্বাস্থ্যখাত ও সামাজিকতার দিকে এখন তারাকান্দা অনেক অগ্রসর।

 

 

তারাকান্দা উপজেলাটি একটি নবগঠিত উপজেলা। এর আয়তন মোট ২৫৭.১৪ বর্গ কি.মি.। ২০১টি গ্রাম আর ১৭৩টি মৌজার সমন্বয়ে গঠিত এই উপজেলাকে ১০টি ইউনিয়নে বিভক্ত করা হয়ছে। এ উপজেলায় বাস করে ৭২, ৯৮৩টি পরিবার। যার মোট সদস্য ৩০৯৭২৯ জন। এই বৃহত্তম জনগোষ্ঠির আয়ের মূল উৎস কৃষি। সাধারণত শতকরা 70ভাগ মানুষই কৃষি কাজের সাথে জড়িত। এখানকার উর্বর জমিতে উৎপাদিত হয় ধান, পাটসহ নানা প্রকার শষ্যপণ্য। উলেখ্য যে, তারাকান্দা উপজেলায় প্রচুর আমন ধানের চাষ হয়। এ উপজেলায় প্রতিবছর আনুমানিক ২০ হাজার ১১ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়।

অন্যদিকে সরিষা চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে তারাকান্দা উপজেলার কৃষকদের মাঝে। সাফল্য আসছে বরবটিসহ বিবিধ সবজি চাষে।

মৎস্য চাষে সারা বাংলাদেশের ৩য় স্থানে আছে তারাকান্দা উপজেলা। এখানকার মৎস চাষীরা প্রায় ২৫ হাজার পুকুর ও বিভিন্ন জলাশয়ে মাছ চাষ করে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি করে। তারাকান্দার উপজেলার একমাত্র নদী রাংসা। নদীটি ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে। ২০ বছর আগেও নদীতে ট্রলার, নৌকা চলত। এখন নদীজুড়ে কচুরিপানার আস্তরণ আর অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের কারণে পানিপ্রবাহে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃষ্টি মৌসুমে উপজেলায় জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করে। তারাকান্দা উপজেলার কাকনী ইউনিয়নের দাদরা বাজারটি রাংসার তীরে। বাজারের পাশে সেতুর অপর প্রান্তে কদমতলী বাজার। এই সেতুতে দাঁড়িয়ে নদীর রেখা দেখা গেলেও পানির দেখা মেলা ভার। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না হলে তারাকান্দার প্রকৃতিতে যে আঘাত আসবে তা অনেক বড় ক্ষতি করবে উপজেলার কৃষি ও প্রাণ প্রকৃতিতে।

তারাকান্দা উপজেলা সংসদীয় আসন ময়মনসিংহ-২ এর অন্তর্ভুক্ত একটি জনপদ। এখানকার মানুষ খূবই পরিশ্রমি ও শান্ত প্রকৃতির। এ অঞ্চলে বিশেষ কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান নেই। এখানকার অর্থনীতির দরপতন হয় মোট ৪৪টি হাট-বাজারকে কেন্দ্র করে। এর মধ্যে তারাকান্দা বাজারই অন্যতম। তবে উপজেলার ৬টি এলাকাকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের সম্ভাবনা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

খুবই শিঘ্রই হয়তো সম্মৃদ্ধির প্রথম সাড়িতে থাকবে জেলার নবগঠিত এই তারাকান্দা উপজেলা। এ উপজেলার মানুষের সুখ-দুখের সাথে মিশে আছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, ভাষা সৈনিক, রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এম শামসুল হক, ইসলামি পণ্ডিত ও লেখক আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া।

যারা শুধু নিজ জন্মভুমিকেই নয় বরং গোটা বাংলাদেশকে আলোকিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।

তারাকান্দা একটি প্রাচীন জনপদ হলেও এ জনপদের প্রাচীণ কোন স্থাপনার সন্ধান এখনো মেলেনি। এখানকার মাঠ ঘাট,গাছ গাছালি, জীবজন্তু, নদীনালা, পুকুর ও কৃষাণের মাঠগুলো অপরুপ মায়াময়। মানুষের স্বাভাবিক জীবন ধারণ, কথোপকথন ও চলাচলে বেশ নমনীয়তা ফুটে ওঠে।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।