Nandigram Thana

নন্দীগ্রাম নামটি শুনলেই যেন আনন্দের আভাস মেলে আপন মনে।

কেন একটি প্রশাসনিক অঞ্চলের নাম হলো নন্দীগ্রাম?  প্রশ্ন উঠতেই পারে… এ প্রশ্নের উত্তর জানতে একটু ইতিহাসের পাতায় নজর করা যাক?

জানা যায় অযোদ্ধার রাজা এর দ্বিতীয় স্ত্রী নন্দিনীর পৈত্রিক নিবাস ছিল এ এলাকাতেই। রানীর সৌজন্যেই রাজা দশরথ এলাকার নাম রাখেন নন্দিনীর গ্রাম। পরবর্তীতে এই নন্দিনীর গ্রামটি কথ্য ভাষায় নন্দীগ্রাম নামে স্থান দখল করে।

সে যাই হোক নন্দীগ্রাম এখন শুধু গ্রাম নয় এটি একটি উপজেলা মানচিত্র। শুধু তাই নয় বগুড়া জেলার দ্বিতীয় সর্ব বৃহৎ উপজেলা এই নন্দীগ্রাম। ব্রিটিশ শাসন আমলে উপজেলার বৃহত্তর রাজশাহী জেলার নাটোর মহকুমার সিংড়া থানার অন্তর্ভক্ত ছিল। এই এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ১৯৩২ সালে ব্রিটিশ সরকার এখানে একটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করে। যা ১৯৩৭ সালে পাঁচটি ইউনিয়নের সমন্বয়ে থানা ঘোষণা করা হয়। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে নন্দীগ্রাম থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।

 

 

বগুড়া জেলা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত নীল আকাশের অন্তরীণ মায়াময় ভূখণ্ড নন্দীগ্রাম থানা বা নন্দীগ্রাম উপজেলা।

দক্ষিনে নাটোর পশ্চিমে কাহালু পূর্বে শেরপুর উত্তরে আদমদিঘী ও দুপচাঁচিয়া উপজেলা। নন্দীগ্রাম উপজেলার আয়তন ২৬৫. ২২ বর্গ কিলোমিটার। এর প্রশাসনিক অঞ্চল মোট ৪৪৫টি গ্রাম, ২৩৫টি মৌজা,  ৫টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা ও একটি থানা নিয়ে গঠিত।

বৃহত্তর এ জনপদে বাস করে প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠী নানা পেশার সাথে জড়িত। তবে প্রায় আশি ভাগ মানুষ কৃষি নির্ভরশীল।

তারা মোট ৫৩,৫০৯ একর আবাদি জমিতে সারা বছর ধান, গম, সরিষা, আলু, মরিচ, ডাল ও বিভিন্ন শাকসবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। নন্দীগ্রাম যেহেতু একটি পল্লী জনপদ তাই এখানে শিল্প কারখানার উপস্থিতি একদমই নেই। তবে এলাকা জুড়ে ক্ষুদ্র শিল্পের উপস্থিতি বেশ রয়েছে। এলাকাটি বন্যামুক্ত। তাই এ অঞ্চলে অসংখ্য কৃত্রিম পুকুরের দেখা মিলবে।  যেখানে মাছ চাষের অধিক সুযোগ রয়েছে।

নন্দীগ্রাম উপজেলা একটি শান্তিপূর্ন নিবিড় পল্লী জনপদ। পল্লীর পরতে পরতে দেখা মেলে সময়ের শ্রেষ্ঠ বাসস্থান আরামদায়ক মাটির ঘর। এ পল্লীর স্বর্গীয় রুপ নিসন্দেহে শহরবাসীকে আকৃষ্ট করবে। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এ মাটির বাড়ি শীত ও গরমের সময় বেশ আরামদায়ক। একসময় গ্রামের বিত্তশালীরা অনেক টাকা-পয়সা ব্যয় করে মাটির বাড়ি তৈরি করতেন। তবে ইট, বালি ও সিমেন্টের আধুনিকতায় মাটির বাড়ি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার নিমাইদীঘি গ্রামে রয়েছে ৪৩ বছর আগে বানানো ৭ কক্ষের তিনতলা মাটির বাড়ি। এসব মাটির দ্বিতল তিনতলা ঘর ছাড়াও নন্দীগ্রামের বুড়ইল ইউনিয়নের হাজারকী গ্রামে কালের সাক্ষ্যি হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে একটি ঐতিহাসিক ছোট্ট জামে মসজিদ। আলিয়ার নামক পুকুরপাড়ে অবস্থিত প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটির মধ্যে ইমামসহ মাত্র ১৫ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটির সামনেই রয়েছে একটি মাজার।

উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের বামনগ্রাম এলাকায় অবস্থিত রয়েছে ঐতিহ্যবাহী দুটি পুকুর। যার নাম “সুখ ও দুখ”। এ পুকুর দুটিকে নিয়ে জনমনে অনেক কল্প-কাহীনি ছড়িয়ে আছে। এলাকার প্রবীণ লোকজনের ধারণা, পুকুর দুটি প্রায় ৫শ বছরের পুরানো। এ দিঘী দুটি শুধু জলধারা বা ঐতিহাসিক কীর্তি নয়, এটি এক বিশাল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অধিকারীও। যা দেখতে সারাবছর দর্শনার্থীদের আনাগোনা লেগেই থাকে। পুকুরের পাশেই রয়েছে গণকবর। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী গনবরের এ স্থানে পার্শ্ববর্তী গ্রামের ৯জন নিড়িহ বাঙ্গালীকে একত্রে গুলি করে হত্যা করে ছিল।

নন্দীগ্রাম উপজেলার থালতা মাজগ্রাম ইউনিয়নে রয়েছে ঐতিহাসিক আরেকটি স্থাপত্য যার নাম থালতেশ্বরী কালীমাতার মন্দির। মন্দিরটি প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো যা উপজেলার সনাতন ধর্মের মানুষের প্রধান তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচিত।

বর্তমানে নন্দীগ্রামে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপস্থিতি তেমন বেশি নয়। পরিসংখ্যানমতে প্রায় ৮৫ শতাংশ মুসলীম এবং ১৫ শতাংশ হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মের মানুষ বাস করে তাদের প্রিয় ভুমি এই নন্দীগ্রামে। তাদের মধ্যে নেই কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, নেই কোন জঙ্গিবাদ তৎপরতা। এখানকার মাট, ঘাট, হাট বাজার সবই আপন মায়ায় কাছে টেনে নন্দীগ্রাম বাসীকে আকড়ে আছে। উপজেলার প্রধান বাজার তথা পৌর বাজারসহ ৫টি ইউনিয়ন এলাকার বাজারগুলো সারাদিন নানামুখী মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে। ক্রেতাদের আনাগোনা ও ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক সৌন্দর্য ফুটে থাকে সকাল থেকে রাতের প্রথম ভাগ অবধি। এরপর যখন ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত মানুষ গুলো নির্জন রাতে আরাম আয়াশে ঘুমিয়ে পড়ে তখন একদল প্রহরী ছুটে চলে উপজেলার একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। যেন অপরাধী চক্ত হানা না দেয় কোন নাগরীক বা তাদের সম্পদের উপর। তারপরও নন্দীগ্রাম থানা এলাকাকে কোন ভাবেই অপরাধমুক্ত বলা চলে না। ঐতিহাসিক কাল থেকেই যে অঞ্চলে অপরাধ সংঘটিত হয়ে আসছে সে অঞ্চলে এখন কেবল অপরাধের ধরন ও পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। একযুগ আগেও নন্দীগ্রাম ছিলো ভয়ংকর সব অপরাধীদের স্বর্গ রাজ্য। কিন্তু আজ তা সংকুচিত হয়েছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রথম ভুমিকা পালন করছে নন্দীগ্রাম থানা পুলিশ। বর্তমানে এ থানা নগরে কি ধরনের অপরাধ প্রবণতা বিরাজ করছে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনোয়ার হোসেন।

 

অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনোয়ার হোসেন নন্দীগ্রাম থানায় যোগদান করেন গত ১৮ মার্চ ২০২২ এ। অর্থাৎ তিনি দেড় বছরের অধিক সময় ধরে এ এলাকার আইন শৃংখলা রক্ষায় থানার প্রধান হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এই দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় তিনি নন্দীগ্রাম সম্পর্কে নানা তথ্য উপাত্ব আয়ত্ব করেছেন। তার ভাষ্যমতে নদীগ্রাম নামের সাথে অঞ্চলের প্রকৃতি সরাসরি সম্পর্কিত। বগুরা জেলার অন্তর্গত এ প্রশাসনিক অঞ্চলটি সম্পূর্ণই নিবিড় পল্লীগ্রাম। এ অঞ্চলটির উপড় দিয়ে বয়ে গেছে ভদ্রাবতী ও নগর দুটি নদ-নদী। মৃত প্রায় নদী দুটি অঞ্চলকে খুব বেশি দরদ দিয়ে জড়িয়ে রেখেছে। কিন্তু মানুষ এক সময় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় মালামাল পরিবহনের জন্য এই নদী দুটিকেই ব্যবহার করতো। তখন অবশ্য সড়ক যোগাযোগ ভালো ছিল না। বর্তমানে নন্দীগ্রামের প্রতিটি ইউনিয়নসহ দেশের অন্য জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগই প্রাধান্য পেয়েছে।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।