maxresdefault 12 jpg

সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল ও একজন সাদা মনের মানুষ নুরে আলম মিনা ১৯৭৬ সালে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানীতে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‍অর্থনীতিতে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

তারপর 1994 এর জুলাই থেকে 1996 সালের এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ৩৪ তম বিএমএ লং কোর্সে তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

পরতর্তীতে 1998 সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস কমিশনের ২০তম পরীক্ষায় সফলতা পেয়ে ২০০১ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে সহকারী পুলিশ সুপার পদে যোগদান করেন।

বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী, সারদা রাজশাহী থেকে প্রশিক্ষণ শেষে ২০০২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন বিলাইছড়ি, রাঙ্গামাটি ও মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া সার্কেল পদে দায়িত্ব পালন করেন। মাত্র ৫বছরে তিনি বাংলাদেশ পুলিশের বেশ কিছু কৃতিত্ব অর্জন করে ২০০৬ সালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পান।

অতপর রেলওয়ে বিভাগ চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলায় অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে অতিরিক্ত উপকমিশনার পদে ডিএমপি ঢাকার রমনা বিভাগসহ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলায় তিনি পুলিশি সেবায় নিযুক্ত ছিলেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে অধিষ্ঠিত সময়ে তিনি সততা, নিষ্ঠা ও কর্তব্যপরায়ণতা দেখিয়ে অর্জন করেন বাংলাদেশ পুলিশের আরও কয়েকটি বিশেষায়িত সম্মাননা।

২৭ এপ্রিল 2012 বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জনাব নুরে আলম মিনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের পদ থেকে পদোন্নতি লাভ করে পুলিশ সুপার পদে সুনামগঞ্জ জেলায় পদায়িত হন।

২০১৩ সালে সিলেট ও ২০১৬ সালের ২০ জুলাই চট্টগ্রাম জেলায় পুলিশ সুপার পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তারপর থেকে চট্টগ্রামের মাটি যেন হয়ে উঠলো তার আপন ভুবন। চট্টগ্রামে জনবান্ধব সেবামুখী পুলিশিং নিশ্চিতকরণ ও কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে জোরদার করার পাশাপাশি তিনি প্রবাসে কর্মরত চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের পুলিশি সহায়তার জন্য চালু করলেন ‘প্রবাসী সহায়তা ডেস্ক’।

থানাই হবে জনগণের একমাত্র আস্থার জায়গা এমন ভাবনায় তিনি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে একচিলতে সময় ক্ষেপন করেননি। স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন বিলিয়ে দেওয়া চট্টগ্রাম জেলার অকুতভয় 81 জন পুলিশ সদস্যের স্মৃতিকে চির আম্লান করে রাখার প্রয়াসে তিনি চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইন্সে নির্মান করেন শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ জাগ্রত’৭১ ও স্মৃতি ভাস্কর্য রণবীর’৭১।

 

‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’ স্লোগানকে হৃদয়ে ধারণ করে মুজিববর্ষ উপলক্ষে স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মারক ম্যুরাল ‘পিতা তুমি বাংলাদেশ’।

 

চট্টগ্রাম জেলার প্রতিটি থানা, তদন্তকেন্দ্র, ফাঁড়ি ক্যাম্পে স্বল্প সময়ে পুলিশি সেবা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক, মাল্টিপারপাস মিলনায়তন, সুসজ্জিত ভাণ্ডার, সুপেয় পানি সরবরাহসহ তিন বছরে বহু উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছেন জনাব নুরে আলম মিনা।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দ্রুত পুলিশ মুভমেন্টের বিকল্প নেই। অনাহুত পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বল্পসময়ে ফোর্স মোতায়েনের জন্য পর্যাপ্ত যানবাহন ছিলনা চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পরিবহন পুলে। এ অভাব পূরণে স্থানীয় শিল্পগ্রুপ, ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের সামাজিক কর্মকাণ্ড (সিএসআর) হতে জনাব নুরে আলম মিনা অনুদান হিসেবে সংগ্রহ করেন ২৯টি গাড়ি ও ১১টি মোটরসাইকেল। যার ফলে সহজতর হয়েছে জেলার অপরাধ দমন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা।

বাংলাদেশ পুলিশের নিয়োগে প্রচলিত অপবাদ ঘুচিয়ে কনস্টেবল নিয়োগে নজির রেখেছেন জনাব নুরে আলম মিনা। দরিদ্র মেধাবীদের অগ্রাধিকার দিয়ে মাত্র ১০০ টাকা খরচে দালাল ও অনৈতিক লেনদেন ব্যতিত প্রার্থীর যোগ্যতার মানদণ্ডে দূর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পুলিশে চাকরির ব্যবস্থা করেছেন তিনি।

জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী আধুনিক, ডিজিটাল ও জনবান্ধব পুলিশি সেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি পুলিশকে অধিকতর জনসম্পৃক্ত করার মানসে তিনি প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের উন্নয়ন ও সাফল্যের সংকলন `অগ্রযাত্রা’ স্মরণিকার।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, শান্তি ও নিরাপত্তার পরিবেশ নিশ্চিতে পুলিশ ও জনগণের মধ্যে অটুট বন্ধন জরুরী এ বন্ধন জোরদারে লক্ষ্যে প্রকাশ করেছেন ‘সেতুবন্ধন’ নামে স্মরণিকার।

তাছাড়াও তার প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম পুলিশ লাইন্স ও জেলার অন্যান্য স্থাপনা পুলিশ ইউনিটগুলো হয়েছে অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন, গোছানো ও দৃষ্টিনন্দন। প্রতিটি পুলিশ সদস্যের মনের ইতিবাচক পরিবর্তন ও তাদের মনোবলকে অনেক বেশি উজ্জীবিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন তৎকালিন চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার জনাব নুরে আলম মিনা।

চট্টগ্রাম জেলাবাসির জন্য সর্বচ্চ নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করতে তিনি জীবন বাজী রেখে বিভিন্ন সময় জঙ্গিবিরোধী অভিযান, সন্ত্রাস দমন, মাদক নির্মূল ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বদাই ছিলেন দুঃসাহসিক এক বীর সৈনিক।

২৮ অক্টোবর ২০১৯ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার জনাব নুরে আলম মিনা অতিরিক্ত উপ পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) পদে পদোন্নিতি পেয়ে ঢাকা রেঞ্জে পদায়িত হন। যেই রেঞ্জের ডিআইজির দায়িত্ব পালনে আছেন জনমানুষের ভালবাসায় বাংলাদেশ পুলিশের আইকন খেতাব প্রাপ্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান বিপিএম বার পিপিএম বার, সেই ঢাকা রেঞ্জে প্রায় আড়াই বছর যাবৎ এ পদে অধিষ্ঠিত থেকে অধিকতর সুনাম ও সততার সহিত দায়িত্ব পালন করে গেছেন। জনাব নুরে আলম মিনা ।

মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গী দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে জনবান্ধব সেবামুখী পুলিশিং নিশ্চিতকরণ, পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট, ডিসিপ্লিন অ্যান্ড প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স শাখার কার্যক্রম তদারকি, ই-ফাইলিং, পুলিশ সদস্যদের যাবতীয় তথ্যাবলি পিআইএমএসের মাধ্যমে সংরক্ষণসহ পুলিশের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় অনেক প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন। এছাড়াও ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় আর্তমানবতার সেবায় উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন জনাব নুরে আলম মিনা, বিপিএম (বার), পিপিএম।

ডিআইজি নুরে আলম মিনা তাঁর কর্মজীবনে কাজের স্বাকৃতিস্বরূপ, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর দারফুর ও সুদান মিশনে দায়িত্ব পালনকালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পদক, এবং বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ‘বেস্ট-ইন-একাডেমিক্স’ পদক অর্জন করেন। এছাড়া ২০১২ সালে এ্যাডিশনাল এসপি হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দক্ষতা ও সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে  ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল-ও ২০১৫ সালে সিলেটের অগ্নি সন্ত্রাস দমনে ‘আইজিপি ব্যাজ’ অর্জন করেন।

 

জনাব নুরে আলম মিনা ২০১৭ সালে মৃত্যুর পরোয়া না করে সাহসিকতার সঙ্গে জঙ্গিবিরোধী দুর্ধর্ষ অভিযান ‘অপারেশন অ্যাসল্ট সিক্সটিন’ পরিচালনার জন্য ২০১৮ সালে জঙ্গী দমনে অসীম সাহসিকতার স্বীকৃতিতে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)- সাহসিকতা’ এবং ২০১৯ সালে পুলিশ সপ্তাহে বিপিএম সেবা পদকে ভূষিত হোন। এছারাও ২০-১২-২১ সালে আইজিপি’স এক্সোমপ্ল্যারি গুড সার্ভিসেস ব্যাজ” অর্জনেও তার নাম রয়েছে।

চাকুরী জীবনে তিনি দেশে বিদেশে বাস্তব প্রশিক্ষণ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। মালয়েশিয়ায় কুয়ালালামপুরে রয়েল মালয়েশিয়ান পুলিশ কলেজ হতে ‘‘ব্যাসিক কমার্শিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন কোর্স’’ সম্পন্ন করেন।

উল্লেখ,  মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এই পুলিশ অফিসার জনাব নুরেআলম মিনা, বিপিএম (বার), পিপিএম পারিবারিক জীবনে দুই কন্যা ও ‍দুই পুত্র সন্তানের জনক।

 

 

বর্তমান সময়ের আধুনিক ও জনবান্ধব পুলিশি সেবা নিশ্চিত করণে সময়ের প্রয়োজনীয়তায় এবং অত্যান্ত সুদর্শন আর বহু গুনে গুনান্বিত এ অফিসার তার কর্ম জীবনের সকল পদায়িত দায়িত্ব পালনে সর্বদা বুদ্ধিমত্তা, বিচুক্ষণতা, সাহসিকা আর অনন্য সফলতায় আবারো একধাপ এগিয়ে ডিআইজি পদোন্নতিতে ভুষিত হয়ে গত ৩১ জুলাই ২০২২ এ রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন।

বাংলাদেশ পুলিশের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) জনাব নুরেআলম মিনা, বিপিএম (বার), পিপিএম এর রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে পুলিশ কমিশনার পদে যোগদান   নিঃসন্দেহে রংপুর বাসীর জন্য আগামীর এক মহা গৌরবের সময়কাল।

আরপিএমপিতে সদ্য নিযুক্ত পুলিশ কমিশনারের ধারাবাহিক এ সফলতার আনন্দে আনন্দিত দেশবাশী, আনন্দিত বাংলাদেশ পুলিশ।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।