Shariakandi Thana

বগুড়া জেলা শহর থেকে প্রায় ২৩ কি:মি: পূর্বে যমুনা নদীর কূল ঘেঁষে অবস্থিত, প্রাকৃতিক সৌন্দয্যে পরিপূর্ণ এক উপজেলা “সারিয়াকান্দি” । ধুধু বালির চড় আর অপরূপ বৈচিত্রময় এ উপজেলায় তেমন কোন প্রাকৃতিক সম্পদ না থাকলেও এর প্রকৃতি এবং নদীমাতৃকা যেন দুই হাতে দান করেছে ‍নিজের অপরূপ মায়া এবং সরলতার অকৃত্বীম সৌন্দর্য।  কিন্তু এ জনপদে প্রতিবছর বর্ষায়, উজানে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করে। তখন চড় এলাকার মানুষ কেবলই আতেঙ্কের মধ্যে সময় কাটায়। এই বুঝি ভেসে যাবে সম্বল; ভেসে যাবে সব আপন ভূমি!

যমুনার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে নদীর বুকে জেগে ওঠে বড় বড় চর। এই চরগুলোতে বসবাস করে নিম্ন বিত্ব শ্রেণির কিছু মানুষ। যাদের সহায় সম্বল বলতে কেবল নিজ কর্ম ও বসতভিটাটুকুই।

 

 

সারিয়াকান্দির অসংখ্য জলধারা নিজের সিগ্ধ জলের মমতাময়ী স্পর্শে এই অঞ্চলের মাটি ও মানুষের জীবনধারাকে অন্যরকম এক মাধুর্যে পরিপূর্ণ করেছে।  সেই জলধারার মধ্যে অধিকতর গুরুত্ব বহন করে যমুনা নদী। ছোট নদী সমুহের মধ্যে মানস, বেলাই, ডাকুরিয়া, সুখদহ ও বাঙ্গালী নদী অন্যতম।  এই উপজেলার প্রায় ৮৫ বর্গ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা নদীর সংস্পর্শে রয়েছে। যার ফলে এ অঞ্চলের মাটির ঊর্বরতা অনেক বেশি, তাই জেলার অধিকাংশ মানুষের জীবিকা কৃষিকে আর্বতন করে নির্বাহ হয়। এখানে বিপুল পরিমাণে লাল মরিচ, ভূট্টা, গম, সরিষা, ধান, পাট, এবং শাকসবজি উৎপাদিত হয়।

সারিয়াকান্দি উপজেলাটি, ঐতিহাসিক ভাবেও অনেক গুরত্ব ও তাৎপর্য বহণ করে। এ অঞ্চলকে কেন্দ্র করেই মৌর্য থেকে শুরু করে গুপ্ত, পাল, এবং সেন বংশের রাজাদের ক্ষমতার চাকার হাতবদল ও রাজ্যের প্রাশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিলো। সারিয়াকান্দি উপজেলায় প্রাচীন নির্দশন ও প্রত্নসম্পদের মধ্যে রয়েছে ফুলবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো কাশিপ্রসাদ রায় জমিদারবাড়ি, এবং উপজেলা সদরের নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ। এছাড়াও, দেবডাঙ্গা ফিস পাস, সারিয়াকান্দির পানি বন্দর, কালিতলা ঘাট, এবং প্রেম যমুনার ঘাট, এই উপজেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

সারিয়াকান্দি নামটি স্বতন্ত্র পরিচয় লাভ করে ১৮৮৬ সালে থানা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে।  এর প্রায় শত বছর পর ১৯৮৩ সালে সরিয়াকান্দি থানা থেকে উপজেলা মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে।

উপজেলার স্থানীয় সরকারের প্রাশাসনিক কার্বক্রমকে মূলত ০১ টি পৌরসভা ও ১২ টি ইউনিয়নে বিভক্ত করা হয়েছে। এই উপজেলার বর্তমান আয়তন ৪০৮.৪৫ বর্গ কিমি এবং বাস করে ২,৪০,০৮৩ জন মানুষ। এই সমগ্র অঞ্চল এবং বসবাসরত নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা দিতে নিরন্তন কাজ করে যাচ্ছে থানার অর্ধ শতাধিক বিভিন্ন পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যগণ।

একসময় এই অঞ্চলের মানুষ শিক্ষার হারে তুলনামূলক পিছিয়ে থাকলেও, বর্তমানে সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষার প্রতি অনুরাগ বাড়ছে।

এ উপজেলাটি বহু কৃতি পুরুষের জন্মভূমি। যারা নিজ উপজেলাকে গর্বিত করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম – মহান জাতীয় সংসদের সদস্য জনাব আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ সরকারের সচিব মোঃ আব্দুর রহিম, বিশিষ্ট ভু-তত্ববিদ মোঃ ইজার উদ্দিন, শিক্ষাবিদ ডঃ এ.কে.এম আজহারুল ইসলাম এবং পপুলার হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডঃ মোস্তাফিজুর রহমান, ‍যিনি নিজ এলাকার মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন, এবং সারিয়াকান্দির অসংখ্য মানুষের জন্য কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।

এ উপজেলাতেই জন্মগ্রহণ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সম্মানিত সমাজসেবক। মোঃ লিয়াকত আলী। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারন করে তিনি দেশ ও সমাজের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। কোনকিছু প্রাপ্তির প্রত্যাশা না করেই নিরবে নিভৃতে সেবা করে যাচ্ছেন সমাজের দুস্থ ও নিম্ন শ্রেণির মানুষের জন্য।  বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় তিনি নিয়মিত ভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন; এবং সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের সার্বিক প্রয়োজনে পাশে দাড়ান। তার মানবিক ও সমাজসেবা মূলক কর্মকান্ডের জন্য, তিনি সকলের শ্রদ্ধাভাজন ও পছন্দের একজন মানুষে পরিণত হয়েছেন।

 

সারিয়াকান্দি উপজেলাটি বগুড়া ১ আসনের অন্তর্ভূক্ত একটি জনপদ। এ জনপদ জুড়ে রয়েছে ছোট-বড় ২১৬টি গ্রাম। সু-শীতল পরিবেশে গড়ে গঠা সরিয়াকান্দির একেকটি বাসস্থান যেন একেকটি পরিবারের শান্তির নিবাশ। এসব নীড়ে বাস করে ৫৫৭১৯ টি ছোট-বড় পরিবার। তাদের সর্বদা শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতিতে সারিয়াকান্দিতে ১টি সারিয়াকান্দি থানা নামে একটি থানা ও চন্দনবাইশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র নামে একটি তদন্ত কেন্দ্র রয়েছে। থানায় কর্মরত রয়েছেন মোট ৪৮ জন প্রশিক্ষিত পুলিশ সদস্য। তন্মধ্যে একজন অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে ১জন পুলিশ পরিদর্শক, ৬ উপপুলিশ পরিদর্শক, ৭ সহকারি উপ পুলিশ পরিদর্শক ও ৩৩ জন কনস্টাবল। এবং চন্দনবাইশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে রয়েছে ১জন পুলিশ পরিদর্শক, ২ জন উপপুলিশ পরিদর্শক, ১ জন সহকারি উপ পুলিশ পরিদর্শক ও ১২ জন কনস্টাবল। তাছাড়াও রয়েছে মোট ১২টি ইউনিয়ন বিট অফিস ও একটি পৌরসভা বিট অফিস।

 

সারিয়াকান্দি উপজেলার প্রায় অর্ধেক এলাকাই চরাঞ্চল। বর্ষাকালে এসব চরে নদীপথে সহজে যাতায়াত করা গেলেও শুকনা মৌসুমে চর জাগার ফলে সার্বিক যাতায়াত ব্যবস্থা প্রায় অচল হয়ে পরে। যার ফলে, এই অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের জনজীবনে নানা ভূগান্তির সৃষ্টি হয় । অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই বাংলাদেশের গ্রাম ও নদীর মোহিত করা দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতি বছরই অসংখ্য পর্যটক ভ্রমণ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।