Sobuj Songket Thumbnail 1 jpg

যমুনা নদী বিধৌত, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ, সুবিশাল সমতল মাটির জেলা সিরাজগঞ্জ। যে জেলার প্রেমে পড়েছিলেন স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এ জেলার  অফুরন্ত জলধারা আর স্বর্গীয় রূপে মোহিত হয়ে লিখেছিলেন ‘নদীযাত্রা’, ‘মানস-প্রতিমা’, ও ‘লজ্জিতা’র মত আরো অনেক কবিতা; রচনা করেছিলেন ‘পোষ্টমাস্টার’, ‘ছুটি’, ‘সমাপ্তি’ও ‘অতিথি’র মত আরো অনেক বিখ্যাত ছোটগল্প। তার কালজয়ী  ‘বিসর্জন’নাটকটিও এখানে অবস্থানকালেই রচনা করেছিলেন।

নদীর নিরবে বয়ে চলা শীতল জল, সবুজ ফসলে ভরা বিস্তীর্ণ সমভূমি, এবং সহজ-সাবলীল জনজীবনের এক অন্যন্য জেলা এই সিরাজগঞ্জ।

একসময় এই অঞ্চলে অপরাধ প্রবণতা অনেক বেশি থাকলেও বর্তমান জেলা পুলিশের নানা সচেতনতামূলক পদক্ষেপে এখানকার মানুষের মধ্যে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং অন্যায়ের প্রতি ঘৃণার জন্ম হয়েছে । এই জেলাটি দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম সংযোগস্থল, যাকে বলা হয় উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার।

যমুনা সেতুর মাধ্যমে  বিপুল পরিমাণে যানচলাচল করে থাকে এ জেলার উপর দিয়ে চলমান মহাসড়কে ।

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উন্নত শহর এবং একটি প্রশাসনিক অঞ্চল সিরাজগঞ্জ জেলা। এ জেলার তাঁত শিল্প বিশ্বের কাছে এক অনন্য উচ্চতায় সমৃদ্ধ করেছে । বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু এবং সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধের অপূর্ব সৌন্দর্য এ জেলাকে পর্যটনসমৃদ্ধ জেলার খ্যাতিও এনে দিয়েছে। তা ছাড়া শাহজাদপুর উপজেলার রবীন্দ্র কাঁচারিবাড়ি, এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বাঘাবাড়ি মিল্কভিটা, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তের ইকোপার্ক, বাঘাবাড়ি বার্জ মাউনন্টেড বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, বাঘাবাড়ি নদী বন্দর,বাঘাবাড়ি প্যারামাউন্ট বাংলা ট্রাক এনার্জি কনসোর্টিয়াম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ইত্যাদি বিখ্যাত স্থাপত্য ও প্রাচীন ঐতিহ্যের নানা নিদর্শন এ জেলাকে সমৃদ্ধতর করেছে।

 

 

সিরাজগঞ্জ জেলার বুক চিড়ে বয়ে গেছে বাংলাদেশের অন্যতম বৃতত্তম নদী যমুনা; এছাড়াও বড়াল, ইছামতি, করতোয়া, গোহালা, গুমনী এবং ফুলঝুড়ি সহ আরো বেশ কয়েকটি নদ-নদী জালের মত ছড়িয়ে আছে এই জেলার সমগ্র অঞ্চল জুড়ে । সপ্তম শতাব্দীর পর থেকে সিরাজগঞ্জ বছরের প্রায় আট-নয় মাস পানির নিচে থাকতো; যার ফলে সেই সময়ে এখানে খুব একটা বেশি জনবসতি ছিলো না । বৃটিশ শাসন আমলের প্রথম দিকে সিরাজগঞ্জ জেলা মোমেনশাহীর অন্তর্ভুক্ত ছিলো। জানা যায়, ১৭৮৭ সালে সোহাগপুরের সম্ম্ভ্রান্ত জমিদার সিরাজ আলী চৌধুরী ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে ‘সিরাজগঞ্জ জমিদারী’ নামে এই অঞ্চলের পত্তনী লাভ করেন । আর সেখান থেকেই সিরাজগঞ্জ নামের উৎপত্তি হয়। ১৮৫৫ সালে যমুনা নদীর গতি পরিবর্তনের কারণে সিরাজগঞ্জ মহকুমাকে পাবনা জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।  পরে ১৯৮৪ সালে সিরাজগঞ্জ মহকুমা পাবনা জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি স্বতন্ত্র জেলা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলার মোট আয়তন ২৪৯৭.৯২ বর্গ কিলোমিটার। এবং জনসংখ্যা ২৯,৪৪,০৮০ জন। এই সমগ্র অঞ্চলকে ০৯ টি উপজেলায় বিভক্ত করা হয়েছে। তবে, জনসাধারণের আইনি সহায়তা, ও শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরনের লক্ষ্যে পূর্বের ৯টি থানার সাথে আরও তিনটি থানা সৃষ্টি করা হয়েছে।

প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার প্রতিটি থানা এলাকাই এখন একেকটি নিরাপদ নগরী। যা সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্যের নিরন্তর কাজের সাফল্য।

 

সিরাজগঞ্জ জেলার স্থানীয় গণমাধ্যম বেশ সক্রিয়। এখানে, দৈনিক যমুনা সেতু, দৈনিক যমুনা প্রবাহ, দৈনিক সিরাজগঞ্জ কন্ঠ, ও দৈনিক কলম সৈনিক সহ মোট ০৮ টি স্থানীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক  পত্রিকা রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মুজিব নগর সরকারের অর্থমন্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, গণিত সম্রাট যাদব চন্দ্র চক্রবর্তী, বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রজন ফতেহ লোহানী, এবং কন্ঠশিল্পী বাপ্পী লাহিড়ী ও হৈমন্তী শুকলার মত বহু গুণী মানুষের জন্মভূমি।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।