Tiger Shuyeb
ক্রিকেট মাঠের গ্যালারীতে বাঘের সাজেঁ যাকে দেখা যায় তিনি শোয়েব আলী, সবাই তাকে টাইগার শোয়েব নামেই চিনেন। ক্রিকেটকে ভালোবেসে বাঘের সাজে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে সমর্থন দেন দেশের বাইরও। বাধা অবশ্য কম পেরোতে হয়নি কখনো ভিসা জটিলতা আবার কখনো নিজের প্রিয় জিনিসটা বিক্রি করে বাংলাদেশের খেলায় বাঘের রূপে সমর্থন দিতে গিয়েছেন দেশের বাইরে। টাইগার শোয়েবের সাথে কথা বলেছেন মোশারফ হোসাইন ।
আলাপচারিতায় শোয়েব আলী বলেন, ২০১২ সালে শুরুর পর দেশের বাইরের কিছু ম্যাচ মিস হলেও দেশের মাটিতে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক কোনো ম্যাচ মিস করেনি শোয়েব। লাল সবুজের পাতাকে হাতে নিয়ে বাঘের সাজেঁ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বলে দিয়েছেন গর্জন। বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটভক্তদের দেখে ২০১২ সালে টাইগার সেজে মাঠে যাওয়ার ইচ্ছে জাগে, তবে বাঘের রূপে আমাকে সাজাবে কে? এটা নিয়ে চিন্তায় পরে যাই। শিল্পকলা একাডেমীতে যাই শিল্পীর খুজেঁ। ভাগ্যক্রমে পাই একজনকে আমাকে বাঘের রূপে সাজাঁবে কিন্তু টাকা চেয়ে বসলো আমার সাধ্যের বাইরে, কথা বলে কমিয়ে দুই বার সাজিয়ে নিই তার কাছ থেকে। এরপর অর্থ সংকটের কথা ভেবে আয়না দেখে নিজেই গায়ে রং করে বাঘের রূপে সাজতাম। তখন প্রচন্ড শীত ছিল, শীতের মধ্যে খালি গায়ে রং করে খেলা দেখতাম, কখনো কখনো শীতে শরীরকে গরম রাখার জন্য প্রচুর মধু খেতাম। ক্রিকেটের জন্য, দেশের জন্য এসব পাগলামী দেখে অনেকে অনেক কথা বলতো তাদের কথায় কিছু মনে না করে আমার ভালোবাসাটা দিয়ে যেতাম এবং এখনও সেই ভালোবাসা ক্রিকেটকে দিয়ে যাই।

 

আরও পড়ুন : জাতীয় দলের ক্রিকেটার হয়ে বাবার স্বপ্ন পূরণ চান শিহাব

 

ক্রিকেটের বাইরের টাইগার শোয়েবের আছে সমাজের মানুষের জন্য ভালোবাসা, দেশের জন্য ভালোবাসা। প্রাকৃতিক দুযোর্গ ও করোনাকালীন সময়ে ছিলেন অসহায় মানুষের পাশে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের খুলনা ও সাতক্ষীরায় ২ দিনের জন্য সহযোগিতা করতে গিয়ে উপকূলীয় এলাকায় থেকেছেন ৪ মাস। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে যতটুকু পেরেছেন অর্থিক সহযোগিতা করেছেন কখনও বা নিজের শ্রম দিয়ে পাশে ছিলেন উপকূলের মানুষের। মানবিক এই কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হন, ট্রলার ডুবির মতো দুর্ঘটনার কবলে পরেও উপকূলে মানবিক কাজ চালিয়ে যান শোয়েব। করোনাকালে টানা ১ বছর ঢাকার রাস্তায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের মাঝে নিজে রান্না করে রাতে খাবার বিলি করতেন। মাদারীপুর, ফরিদপুর, রংপুর কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধাসহ দেশের বন্যা কবলিত এলকায় ছিল শোয়েবের মানবিক সহায়তা। শোয়েব বলেন, ফেসবুকে মানুষ এসব সহায়তার কার্যক্রম দেখে বিশ্বাস করে টাকা পাঠাতো, আমি অসহায়দের সহযোগিতা করে বিশ্বাসের মর্যাদা দিতাম। আমার কষ্ট করতে সমস্যা নেই। দেশে জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারছি দিন শেষে এটাই আমার প্রাপ্তি।
বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে, বাড়ি থেকে চাপ দিলেও নিজেকে নিয়ে তেমন পরিকল্পনা নেই শোয়েবের। ক্রিকেট তার ধ্যান, ক্রিকেট তার ভালোবাসা আর ক্রিকেট মাঠে লাল সবুজের পতাকা উড়ানোই তার নেশা। ক্রিকেটাররা কেমন উৎসাহ দেয় জানতে চাইলে শোয়েব বলেন, একটা সময় বাংলাদেশ দীর্ঘদিন পরপর জিততো তখন আবেগটা বেশি কাজ করতো, এখন ঘনঘন জেতার কারণে আবেগ হয়ত কম কাজ করে। আগে ক্রিকেটাররা বেশি উৎসাহ দিত এখন কম দেয় এটা করোনার কারণেও হতে পারে। অনেক ক্রিকেটাররা অনেক কিছু দিতে চাইতো, আমি নেয়নি। যখন দেশের বাইরে খেলা দেখতে যাওয়ার জটিলতায় পরি তখন সহযোগিতা নেওয়ার চেষ্টা করি।
মাঠে টাইগার সেজে থাকা শোয়েব দর্শকদের ভালোবাসায় সিক্ত হন সবসময়ই, সেই ভালোবাসা তাকে আরও অনুপ্রাণিত করে, তবে দর্শকদের প্রতি আছে আক্ষেপও। তিনি বলেন বিজয়ে ৫০ বছর পেরিয়ে গেল। ক্রিকেটপ্রেম জাগ্রত হলেও এখনও তরুণদের মাঝে দেশপ্রেম পরোপুরি জাগ্রত হতে পারি। গ্যালারিতে জাতীয় সংগীতের মর্যাদা ও জাতীয় পতাকার মর্যাদা রাখতে পারেনা অনেকে। ক্রিকেটপ্রেমের আগে দেশ সম্পর্কে জানাটা জরুরি, পরিবারে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেশপ্রেমে শিক্ষা ফলপ্রসূ করার দাবি এই দেশপ্রেমী ক্রিকেট ভক্তের।
error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।