করে খাইচুরি করি না

প্রথম ঢাকায় রিকশার প্রচলন ও কেমন আছে রিকশা চালকগণ

মানুষের দৈহিক ও মানষিক প্রশান্তি ও সুস্থ্যতার মুল উপাদান হচ্ছে কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়। মানুষের সাফল্যের ও জয় লাভের মুল হচ্ছে এই কর্মপ্রচেষ্টা। যারা অনেক বেশি পরিশ্রমী তাদের সাফল্য অর্জন ব্যাপক আর যারা অপেক্ষাকৃতভাবে অলসভাবে বেচে থাকে তারা সফলতার থেকেও তুলনামূলকভাবে বঞ্চিত। হতদরিদ্র ভানভাষি মানুষের উচিৎ দারিদ্রতা থেকে মুক্তি লাভ করার জন্যে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকা এবং সম্মান ও মর্যাদার সাথে নিজেদের জীবনকে রাঙ্গাতে কাজ করা যাতে অপরের কাছে হাত বাড়াতে না হয়। আর বাংলাদেশের সল্প আয়ের মানুষগুলো ভরন পোষন চালানর সব চাইতে সহজলভ্য বিষয় হলো রিকশা।

বিভিন্ন তথ্যমতে বাংলাদেশেই শতকরা ৬০ থেকে ৭০% হতদরিদ্র রিকশা নামক বাহনের উপর জীবন ধারন কর। কিন্তু কেমন আছে ঢাকার রিকশা চালকগুলি? কিভাবে চলে তাদের জীবন? তা আজ জানবো এক রিকশা চালক মামার কাছে।

রিকশা মামার জীবন?

এই রাজধানীর বুকে অসংখ্য রিকশা চালকের মধ্যে আমাদের সাথে দেখা হল মোহাম্মদ মোখলেস মামার সাথে। আমরা জানতে চাই কেমন আছেন তিনি? তিনি আমাদের বলেন, হ্যাঁ তিনি ভাল আছেন। তিনি প্রায় বিশ বছর আগে এসেছিলেন এই রাজধানীতে জীবিকার সন্ধানে। তারপর থেকে তিনি বিভিন্ন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তার মধ্যে ভেন চালানো, ছোট খাটো ব্যবসা, এবং সর্বশেষ রিকশা। এক ছেলে এক মেয়ের সংসারে আয় করার একমাত্র মানুষটি তিনিই ছিলেন। অনেক কষ্টে মেয়েটিকে বিয়ে দেন এই মোখলেস মামা। তবুও মুখে আনন্দের ও প্রশান্তির হাঁসি। যা আছে তা নিয়ে এই মানুষটি সুখি। কিন্তু আমরা কত কিছু নিয়েই হতাশায় ভুগি।মোখলেস মামার মত এমন অনেকেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে এই রিকশা চালানোর মাধ্যমে। কিন্তু কবে এসেছিল এই রিকশা রাজধানীর বুকে?  তা নিয়ে রয়েছে অসংখ্য জনমত ও ইতিহাস।

যখন রাজধানীতে প্রথম রিকশার আগমন

কথিত আছে বর্তমান মায়ানমার বা রেঙ্গুন থেকেই চট্টগ্রামে প্রথম রিকশা আসে ১৯১৯ সালের দিকে। এরপর রিকশা আসে ঢাকায়। তবে বলা হয়ে থাকে ঢাকার রিকশার আগমন ঘটেছিল ভারতের কলকাতা থেকে। যা ১৯৩০ এর দশকে বলে ধারনা করা হয়।

এ জন্যেই দুই রিকশার কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য কিছুটা আলাদা ছিল। তবে মুনতাসির মামুনের গবেষণা প্রবন্ধে এই সময়কাল কিছুটা ভিন্নভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে ১৯৩০ এর দশকেই কলকাতায় প্যাডেল চালিত সাইকেল রিকশা চালু হয়েছিল। এরপর একি দশকের মাঝামাঝিতে সেই রিকশা বাংলাদেশে আসে এবং ১৯৩৭ সালের কোন একটি সময় ঢাকায় আসে প্যাডেল চালিত রিকশা।

বাংলাদেশে শুরু থেকেই এই সাইকেল রিকশার প্রচলন ঘটে, মানুষের হাতে টানা রিকশা নয়।

মুনতাসির মামুন বলেছেন, সিঙ্গাপুরে গত ১৯০০ শতকের ত্রিশের দশকে ব্যাপক হারে সাইকেল রিকশা চালু করা হয়। আর সেই সিংগাপুর থেকেই থেকে ঢাকাসহ এশিয়ার বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে এই রিকশাগুলো।

অন্যদিকে মোমিনুল হকের আত্মজীবনীতে এ সম্পর্কে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ১৯৪০ সালের জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জের পাট কোম্পানি রেলি ব্রাদার্সের এক কেরানী কলকাতা থেকে একটি রিকশা নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসেন। তার মতে, “এর আগে পূর্ববঙ্গে কেউ রিকশা দেখেনি।”

প্রথম রিকশার মালিক ছিলেন যদু গোপাল দত্ত। প্রথম রিকশা চালকের নাম নরেশ বলে মোমিনুল হকের আত্মজীবনীতে উল্লেখ আছে। এরপর যদু গোপাল দত্তের প্রতিবেশী শিশির মিত্র ৪টি রিকশা আমদানি করেন। সেই থেকেই অল্প অল্প করে রিকশা আমদানি শুরু হয়। হাতে টানা কিছু রিকশাও আমদানি করা হয়েছিল কিন্তু তাতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়ায় পৌরসভা তা বন্ধ করে দেয়। মূলত আমদানি করা রিকশাগুলোয় চেইন লাগানো ছিল বলে বইটিতে উল্লেখ করা হয়। যেন মানুষের পরিশ্রম কম হয়।

বাংলাপিডিয়া বলছে, নারায়ণগঞ্জ এবং নেত্রকোনা শহরে বসবাসরত ইউরোপীয় পাট রপ্তানিকারকরা তাদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য, ১৯৩৮ সালে প্রথম কলকাতা থেকে চেইন লাগানো রিকশা আমদানি করে। এরপর ঢাকার সূত্রাপুর এলাকার একজন বাঙালি জমিদার এবং ওয়ারীর এক গণ্যমান্য ব্যক্তি রিকশা কিনে ঢাকায় প্রচলন করেন বলে জানা যায়।

এভাবেই বাংলাদেশে রিকশা চলাচল শুরু হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বলা যেতে পারে ঢাকায় রিকশা প্রচলিত হয়েছে ১৯৪০ সালে বা তার কিছু পরে।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।