maxresdefault 3

ইতিহাস ঐতিহ্যে কটিয়াদি উপজেলা

হয়রত শাহ শামুসুদ্দীন বুখারী (রা), বাংলার বার ভুইয়ার অন্যতম বীর ঈসা খাঁ এবং রাজা নবরঙ্গ রায়ের স্মৃতি বিজড়িত অরণ্যে ঘেরা অপরূপ প্রাকৃতিক  লীলাভূমির নাম কটিয়াদী উপজেলা।কটিয়াদী উপজেলা বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা

অবস্থান এবং আয়তন

কটিয়াদি শহরটির উত্তরে কিশোরগঞ্জ সদর ও করিমগঞ্জ, দক্ষিণে বেলাবো ও মনোহরদী, পূর্বে নিকলী ও বাজিতপুর এবং পশ্চিমে পাকুন্দিয়া অবস্থিত। কটিয়াদী উপজেলার আয়তন প্রায় ২১৯.২২ বর্গ কিলোমিটার।

কটিয়াদী উপজেলার নামকরণের ইতিহাস

ইতিহাস পর্যালোনা করলে দেখা যায়, প্রায় ৩ হাজার বছর আগে থেকেই কটিয়াদীতে মানুষের বসবাস শুরু হয়।  তখন এ অঞ্চলটি ঠিক কি নামে পরিচিত ছিল তার কোন ইতিহাস জানা যায় না। তবে ১২২৫ খ্রীষ্টাব্দে বর্তমান কটিয়াদী উপজেলাধীন একটি গ্রাম কুড়িখাই নামের একটি অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায়। বলা হয় হযরত শাহ শামসুদ্দিন বুখারী ইসলাম প্রচারের জন্য তৎকালীন এ অঞ্চলে এসে একটি আস্তানা স্থাপন করেন। তখন থেকেই এই অঞ্চলের নাম কুড়িখাই হিসেবে জনশ্রুতি পাওয়া যায়।ইতিহাসবিদদের মতে বর্তমান কটিয়াদি উপজেলায় প্রাচীন আমলে উপজাতিরা বসবাস করত। এই উপজাতিদের বসবাসের জন্য তাদের নামানুসারেই এ অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের নামকরণ হয়েছিলো। অবশ্য তখন কটিয়াদি এলাকার বৃহৎ অংশই ছিল জলভূমি।জনশ্রুতি আছে, কটিয়াদীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া আড়িয়াল খাঁর উত্তর তীরে কটি ফকির নামে আধ্যাত্মিক শক্তি সম্পন্ন এক লোক বাস করতেন। সে এলাকার বহুলোক তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তিতে প্রভাবিত হয়ে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহন করেন। মনে করা হয়, উক্ত কটি ফকিরের নামানুসারে ভাষান্তরের মাধ্যমে এই এলাকাকে কটিয়াদী নামকরন করা হয়েছে। তবে বিজ্ঞজনদের মতে কটিয়াদী শব্দের “দী” বিশেষ সম্মান অর্থে ব্যবহার করা হয়। তাই এখানেও হয়তো এই নামের যথার্থ কোন ব্যখ্যা রয়েছে।

কটিয়াদি শহর  উপজেলা এবং থানায় রুপান্তর

প্রায় আটশত বছর পূর্বে ইসলাম ধর্ম প্রসারিত এ অঞ্চলে কটিয়াদী থানার জন্ম হয় ১৮৯৭ সালের ১৯ মে। পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৮৩ সালে কটিয়াদী থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে একটি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কটিয়াদী উপজেলার আয়তন ২১৯.২২ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ৩ লাখেরও অধিক। যদিও সর্বশেষ  আদমশুমারী-২০১১ অনুযায়ী এ সংখ্যা দেখানো হয়েছে ২,৭৭,৬৬০ জন।

gif maker

কটিয়াদি উপজেলার শিক্ষা চিকিৎসা ব্যবস্থা

৯৫টি মৌজায় বিভক্ত ১৫১টি গঠিত কটিয়াদী উপজেলার রয়েছে ৩টি কলেজ ও ২৪টি উচ্চবিদ্যালয় ও ১১৩টি স. প্রা. বিদ্যালয়সহ মোট ১৭৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

কটিয়াদি উপজেলার জনগনকে সু-চিকিৎসা প্রদানের লক্ষে রয়েছে একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৬টি, গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩টি, কমিউনিটি ক্লিনিক ৪৩টি সহ নানান বেসরকারি চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান।

এ অঞ্চলে বৃহৎ  কোন শিল্প কারখানা না থাকলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারী কুটিরশিল্প গড়ে উঠেছে প্রায় ১৫শত এর মত।দিনে দিনে গড়ে উঠেছে অসংখ্যা কৃষি উদ্দ্যোক্তাসহ নানাবিধ এনজিও বা অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান।রয়েছে কয়েকটি আঞ্চলিক পত্রিকা। তন্মধ্যে দৈনিক গৃহকোণ ও শতাব্দির কণ্ঠ উল্লেখযোগ্য।

অর্থনীতি

তবে কটিয়াদী উপজেলার অন্যতম চালিকাশক্তি কৃষি হলেও মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, আমেরিকা, লন্ডন দেশগুলোতে ছড়িয়ে আছে এ উপজেলার বহু যুবক। যাদের প্রেরিত রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিতে বিশাল ভুমিকা পালন করছে।অত্র উপজেলাতে কৃষি শ্রমিক রয়েছে ৭০%,প্রবাসী ১৯.%,চাকুরিজীবি .০৫ %,অন্যান্য .৪৫ %

প্রধান উৎপাদিত ফসল হিসেবে রয়েছে ধান, পাট, গম, সরিষা, চিনাবাদাম, রসুন, টমেটো, পেঁয়াজ, মরিচ, আলু, আখ, সবজি. বিলুপ্ত বা প্রায় বিলুপ্ত শস্য তিল, তিসি, তুলো, কৌন, বার্লি এবং কালোজিরা। সমতল আবাসভুমির এই কটিয়াদী উপজেলা জুড়ে দাড়িয়ে আছে প্রকৃতির প্রধান উৎস ছোট ছোট গাছ।

প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য দর্শনীয় স্থান

সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক  বাড়ি

কটিয়াদী উপজেলার মসুয়া গ্রামে অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি রয়েছে। এক সময় এই বাড়িটিকে ‘পূর্ব বাংলার জোড়াসাঁকো’ বলে অভিহিত করা হতো। এই বাড়িতেই প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক, সঙ্গীতজ্ঞ উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী ও সুকুমার রায় চৌধুরী জন্মেছেন

কুড়িখাই মাজার শরিফ

কটিয়াদী উপজেলার ৫ নং মুমুরদিয়া ইউনিয়নের কুড়িখাই গ্রামে হযরত শামসুদ্দীন আউলিয়া সুলতান বুখারি এর মাজার অবস্থিত । যিনি ৩৬০ আউলিয়ার একজন । তিনি ছিলেন হযরত শাহজালাল এর সঙ্গী। এটি কুড়িখাই  মেলা নামে পরিচিত।

হযরত মিয়া চান্দ শাহ এর মাজার

৪ নং চান্দপুর ইউনিয়নের সেকের পাড়া গ্রামে হযরত মিয়া চান্দ শাহ এর মাজার অবস্থিত । এ মাজার চূনের মাজার নামে পরিচিত । চান্দপুর ইউনিয়নের মন্ডল ভোগ গ্রামে প্রতি বছরের চৈত্র মাসের প্রথম রবিবার বসে এক রাতের বিশাল মেলা, যা পাগলা মেলা/রহমান শাহ মেলা হিসেবে খ্যাত।

কটিয়াদী উপজেলার  কৃতি ব্যক্তিত্ব

ঐতিহ্যবাহী এই উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুর মোহাম্মদ, সাবকে বৈজ্ঞানিক ও কথা সাহত্যিকি ড. আবিদ আনোয়ার, ড. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক অধ্যাপক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সেলিম আফ্রাদ কবি,সাহিত্যিক এবং চরকাউনিয়া ইলমা অটিস্টিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা।

ঐতিহ্যবাহী কটিয়াদী উপজেলাধীন বসবাসকারী কৃষিজীবি, চাকুরীজীবি ও ব্যবসায় কর্মে নিয়োজিত মানুষের বর্তমান অবস্থা কেমন চলছে তা দেখতে চায় চ্যানেল আই পজিটিভ থিংক টিম। তাই অঞ্চলের রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্থানের মানুষের জীবনচিত্র ধারণ করা হয় সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি।

 

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।