padma setu

সারাদেশ: পদ্মা সেতু উদ্বোধনের একমাস পূর্ণ হয়েছে। মাত্র ৩০ দিনে সেতুর দুই পারের এলাকার চিত্র বদলে গেছে। মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজার সামনে এখন জমজমাট অবস্থা।

এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়াতে এখানে বেড়েছে যানবাহনের চাপ। সেতু দিয়ে রাত দিন ২৪ ঘন্টা বিরতিহীনভাবে পারাপার হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের যানবাহন। আর সেতু ঘিরে পর্যটকদের পদচারণা ব্যাপক হারে সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে ছুটির দিনে ঢল নামে পর্যটকদের। সেতুর ওপরে চলন্ত অবস্থাই সেলফি তোলার হিড়িক পড়ে যায়। প্রতিটি যানবাহন সেতু অতিক্রমকালেই মোবাইলে ছবি আর ভিডিও ধারণের চিত্র সবসময়ই চোখে পড়ে।

সেতু চালুর পর পদ্মার দুই পারেই জমির দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। সেতু চালুর পর যেন এলাকার চিত্রই পাল্টে গেছে। উদ্বোধনের পর দিন ২৬ জুন থেকে যান চলাচল শুরু হওয়ার প্রথম এক মাস পূর্ণ হলো আজ মঙ্গলবার। প্রথম ২৯ দিনে পদ্মা সেতুতে টোল আদায় হয়েছে ৭৪ কোটি ২৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫০ টাকা। গড়ে প্রতিদিন টোল উত্তোলনের হার ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার উপরে।

পদ্মা সেতু চালুর ফলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, জিডিপিতেও পদ্মা সেতু  অবদান রাখছে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে পুরো দেশে। এতকিছু ছাপিয়ে পদ্মা সেতু মাওয়া প্রাপ্ত অর্থাৎ মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মানুষের গত ১ মাসে সেতুর সুফল নিয়ে নানা কথাও রয়েছে। সেতু চালু হওয়ার ফলে শিমুলিয়া ঘাটকেন্দ্রিক কিছু মানুষ কর্মহীন হয়ে পেশা পাল্টেছেন বা পাল্টাচ্ছেন। লঞ্চের কর্মচারী, স্পিডবোট চালক, ঘাটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকার মিলে লৌহজং উপজেলার অন্তত ১ হাজার মানুষ এই তালিকায় রয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে স্থানীয় সমাজে বিশেষ করে হাট বাজারে।

শিমুলিয়া ঘাট চালু থাকাবস্থায় লৌহজং উপজেলার যে রমরমা ভাব ছিল, এখন তা কমে এসেছে। তবে ছুটির দিনে পর্যটক আসছে আগের চেয়ে বেশি। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেস হয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন পারাপার হচ্ছে। কিন্তু সেতুর নিচে মাওয়া বাজার, কুমারভোগ গ্রাম যেন অনেকটা আলোর নিচে অন্ধকার। এখানে আগেরমতো কোলাহল নেই, মানুষের আনাগোনা নেই।

শিমুলিয়া বন্দর কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।  ৮৭ লঞ্চের মধ্যে ৫টি লঞ্চ অন্য নৌরুটে চলাচল করছে। আর ৫টি লঞ্চ বিক্রি হয়েছে। বাকিগুলো অন্যরুটে যাওয়ার চেষ্টা করছে। নিবন্ধিত ১৫৫টি স্পিডবোটের মধ্যে ১৫টি অন্য রুটে চলাচল করছে। বাকিরা এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।

এদিকে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এখানে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার অপেক্ষায় অনেকে। শিমুলিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, শূন্য পার্কিং ইয়ার্ড, যেখানে একমাস আগেও শত শত যানবাহন ফেরির অপেক্ষায় থাকতো। অন্যদিকে সারিবদ্ধভাবে ঘাটে লঞ্চ বেধে রাখা হয়েছে। মাঝেমধ্যে ২/১টি স্পিডবোট যাত্রী নিয়ে মাঝির কান্দি ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে।

এছাড়া পর্যটকও স্পিডবোট নিয়ে পদ্মা সেতু দেখতে যাচ্ছেন। পদ্মা সেতু চালুর পর বিপাকে পড়েছেন উপজেলার ঢাকাগামী মানুষ। সেতু চালু হওয়ায় শিমুলিয়া ঘাটের যাত্রীবাহী বাস ঢাকা হতে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গাসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে চলাচল করছে। ঢাকা-ভাঙ্গা ও ভাঙ্গা-ঢাকা রুটের বাস মুন্সীগঞ্জের লৌহজং শ্রীনগর ও সিরাজদিখানের যাত্রীদের তুলছে না। অনেকেই জানান, সেতু হওয়ার কারণে যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তারা জমির কয়েকগুণ দাম ছাড়াও পুনর্বাসিত হয়েছেন। পুনর্বাসন কেন্দ্রের পরিবেশও বেশ চমৎকার। কেন্দ্রের ভেতরে রয়েছে স্কুল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, পুকুর বাজার, মসজিদ ইত্যাদি। সর্বপরি দেশের সর্বোচ্চ ব্যয় বহুল প্রকল্প এই লৌহজং উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। এটা নিঃসন্দেহে গর্বের বিষয়।

সেতু এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন লক্ষণীয়। এখানকার পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে শিমুলিয়ার হোটেলগুলো পুনরায় ঢেলে সাজানো হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ পর্যটন কেন্দ্রিক বড় পরিকল্পনা করতে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে পদ্মা সেতুর দুই পাড়ের চিত্র এখন ভিন্ন। উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে সবখানেই। সময়ের সাথে সাথে আরও পরিবর্তন লক্ষ করা যাবে।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।