Savar

৩০ লাখ বাঙ্গালীর প্রাণরে বনিমিয়ে লাল-সবুজরে মানচত্রিরে স্মৃতিভূমি, ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদের স্মৃতি রক্ষা ও শ্রদ্ধা প্রর্দশনে নিমির্ত দেশের একমাত্র জাতীয় স্মৃতিসৌধের পুন্যভুমি এবং দেশের গুরুত্বর্পূণ প্রশাসনকি অঞ্চলরে নাম সাভার উপজলো। বংশাই ও ধলশ্বেরী নদীর পললে গড়া, ঢাকা মেগাসিটির অর্ন্তভুক্ত অন্যতম জনপদ সাভার দেশের মানুষরে কাছে একটি সুপরিচিত নাম। সবুজ শ্যামল আর শান্ত পরিবেশেল এ অঞ্চলটির উপর দিয়ে বয়ে গেছে তুরাগ, ধলেশ্বীর ও বুড়িগঙ্গা নদী।

ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯১২ সালে সাভারে প্রথম থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন এর আয়তন ছিল তৎকালীন মহকুমার বিশাল এলাকা জুড়ে। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালের দিকে সাভার থানাটি উপজেলার স্বীকৃতি লাভ করলে শিল্পসমৃদ্ধ অঞ্চলটির প্রশাসনকি দায়ত্বি অনেক বেড়ে যায়। ফলে ২০০৫ সালে থানা অঞ্চলটি ২ ভাগে বিভক্ত হয় এবং ১৩১.৪৯ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে সাভার থানাটি একটি মডেল থানা হিসাবে যাত্রা শুরু করে।

১৭৬৭  রে জরিপে রেনেলের মানচিত্র এ অঞ্চলের নাম ছিল সম্ভার । তবে প্রাচীন একটি ছড়ার সারংশ থেকে জানা যায় সেকালরে  বংশাবতী নদী ছিল র্সবশ্বের নগরী । এই নগরীর রাজা ছিল হরশ্চিন্দ্র । সে সময় তাঁর রাজ্য ছিল সুখ শান্তি ভরপুর। আর এই সুখময় রাজ্য র্সবশ্বের নগরীর অপভ্রংশই সাভার নামে প্রতিষ্ঠিত হয়ছে ।

প্রানের শহর সাভার

নৈসর্গিক সৌর্ন্দয , সবুজে ভরা মাঠ আর, গোলাপের চাষে বিখ্যাত সাভার মডেল থানাটি একটি পৌরসভা, ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।এ অঞ্চলরে সাধারণ মানুষ ও কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তনে বংশী, তুরাগ ও ধলশ্বরেী নদীর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। এই নদীকে কেন্দ্র করে এক সময় এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল ব্যবসা-বাণিজ্য।
রাজধানী থেকে মাত্র ২৪ কিলোমিটার দূরত্বে ও অতি নিকটে হওয়ায় সারা দেশেল সাথে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ উন্নত। ফলে অঞ্চলটি দিনে দিনে শিল্পকলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্মৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। সংস্কৃতি ও ইতিহাস সমৃদ্ধ সাভাররে শিক্ষার হার দুই দশক আগে ৬৮% হলেও বর্তমানে তা প্রায় শতভাগে উপনীত হচ্ছে। ৭টি ইউনিয়ন বিভিন্ন অঞ্চলজুড়ে দুই শতাধকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভীড়ে বিশেষত্ব দখল করে রেখেছে, সাভার সরকারি কলেজ, মোফাজ্জল মোমেনা চাকলাদার মহিলা কলেজ, এনাম মেডিক্যাল কলেজ, ব্র্যাক ড্যাফোডলি বিশ্ববিদ্যালয়, সিটি বিশ্ববিদ্যািলয় ও অধরচন্দ্র উচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়।

অঞ্চলের বেকার যুবক, প্রবাসী, গ্রামীণ লোকদের জন্য গড়ে উঠেছে জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র ও বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সহ অসংখ্যা প্রশিক্ষণকেন্দ্র।

বাংলাদেশের অন্যতম শিল্পপ্রধান অঞ্চল ও ঢাকা জেলার মেগাসিটির অংশ সাভার থানার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থাও বেশ উন্নত। এ অঞ্চলে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও অসংখ্যা প্রতিষ্ঠান চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। এছাড়াও বাংলাদেশের সমগ্র অঞ্চলের পক্ষাঘাতগ্রস্থ লোকদের চিকিৎসা সেবা ও পূর্ণবাসনের জন্য ১৯৯০ সালে সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) গড়ে উঠেছে।

ব্যবসা-বাণিজ্য, নদী বিধৌত, কৃষি, দুর্ঘটনার সংবাদ জানাতে এ অঞ্চল থেকে দৈনিক গণমুক্তি, দৈনিক ফুলকি, জ্বালাময়ী, সাপ্তাহিক জাগ্রত কণ্ঠ, গণভাষ্য নামে পত্রিকা প্রকাশিত হয় । এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন তৎক্ষণিক তথ্য জানাতে বেশ কিছু অনলাইন মাধ্যম,পত্রিকা-সাময়িকী, নিয়মিত-অনিয়মিত ভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছে।

সাভার থানা এলাকাটি অতীত থেকে কৃষি সমৃদ্ধ অঞ্চল হলেও একবিংশ শতাব্দিতে এসে শিল্প প্রধান অঞ্চলে রূপ লাভ করে। এখানে উৎপাদিত পোশাক, সোয়োটার, কম্বল, জার্সি, ও জুতা ইত্যাদি পরিধায় বস্ত্র রপ্তানির পাশাপাশি দেশের চাহিদা পূরণে অনন্য ভুমিকা পালন করে আসছে।

এছাড়াও কৃষি থেকে বেশ লাভবান হয় এ অঞ্চলের মানুষ। কাঁঠাল, পেঁপেসহ মৌসুমী নানা সবজি চাষের পাশাপাশি ফুলের চারা চাষ বেশি হয়ে থাকে এখানে। শ্যামপুর, মোস্তাপাড়া, বিরুলিয়া, ভবানীপুর সংলগ্ন গ্রামে বড় আকারে গোলাপ চাষ হয়। বর্তমানে গ্রামগুলি অধিকাংশ মানুষ বাণিজ্যিক ভাবে গোলাপ চাষে জড়িত। আর গ্রামগুলো গোলাপের গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এছাড়া অনেক ‍পশুপালন, মৎস্যচাষ কুটিরশিল্প, বেতের কাজ, কাঠের কাজসহ বেশ কিছু ছোট কারখানা পরিচালনের মাধ্যমে তাদের জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা ভূমি খ্যাত সাভার থানা জীববৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ অরণ্যালয়। মূলত এটি সাভার মিলিটারি ফার্মের একটি চিড়িয়াখানা ও পিকনিক স্পট। এখানকার শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ ও পাখির কিচিরমিচির শব্দ মুনোমুদ্ধ করবে আগতদের।পর্যটকদের জন্য রাজা হরিশচন্দ্রের প্রাসাদ, ১৮ শতকে নির্মিত প্রাচীন দেওয়ানবাড়ি মসজিদ বিরুলিয়া জমিদার বাড়ি একটি অন্যতম দর্শণীয় স্থান।

সাভারের শিক্ষা ব্যবস্থার সূচনাকারী,  বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক রাখাল চন্দ্র সাহা, বাংলার খ্যাতিমান শিশু সাহিত্যিক ও লোককথার সংগ্রাহক দক্ষিণারঞ্জন মিত্র, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. এনামুর রহমাসহ অসংখ্যা কৃর্তি পুরুষের জন্ম ভূমি এ সাভার অঞ্চল বাংলার মানুষের কাছে এক পরিচিত নগরী। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধ্বসের ভয়াল ঘটনা আজও প্রতিটি মানুষের হৃদয়কে ব্যথিত করে। প্রায় বারো শ মানুষের প্রাণের নিস্পত্তি ঘটেছিলো সেদিনের সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায়। সেই ঘটনার আতংকে আজও এখানকার শ্রমিকরা দিনাতিপাত করে। তাদের জীবনে যেন আর এমন ঘটনা দেখতে না হয়।

বর্তমানে সাভার মডেল থানা অঞ্চলে স্থায়ী বসবাসকারি, কর্মরত ও ভাসমান জনসংখা মিলিয়ে প্রায় 30 লাখ মানুষের বসতি রয়েছে। যেহুতু অঞ্চলটি অধিক ঘনবসতিপূর্ণ তাই এলাকার অপরাধী চক্রের সংখ্যাও তুলনামুলক বেশি আসংকা করা হয়।

চাদাবাজি, সন্ত্রাস, জিম্মি, জমি দখল, নদীর চড় থেকে অবৈধ বালু বিক্রয় ও পারিবারিক কলহের মতো গুরুতর অপরাধগুলো দানা বেধে থাকে সাভার অঞ্চল। প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়ে অপরাধীদের বিভিন্ন অপকৌশল যেন সমাজের কিছু মুখোশধারী মানুষের পেশা হয়ে দাড়িয়েছে।

তাদের ভয়ংকর সব পরিকল্পনাকে শক্ত হাতে দমন করে মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা ও সেবার ব্রত নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশও এবার অধিকতর সোচ্ছার ভুমিকায় মাঠে নেমেছে। তারই ধারাবাহিকতায় অতন্দ্র প্রহরীর মতো দায়িত্বে নিয়োজিত থেকে সাভার মডেল থানার প্রশিক্ষিত পুলিশ সদস্যগণ দুর্বার গতিতে কাজ করে চলেছেন।

আর তাদের নেতৃত্ব রয়েছেন থানার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আসনে অধিষ্ঠিত অফিসার ইনচার্জ জনাব কাজী মাইনুল ইসলাম পিপিএম।উল্লেখ্য তিনি ছোট বেলা থেকেই একজন গর্বিত পুলিশ অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন।

তার অদম্য ইচ্ছে থেকে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করে অসম সাহসিকতার সাথে সমাজের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছেন।তিনি  বাংলাদেশ পুলিশে বীরত্ব ও সাহসিকতার স্বীকৃতি সরুপ পিপিএম পদকে ভূষিত হয়েছেন।

সাভার মডেল থানায় যোগদান করেও তিনি সততা ও সাহসিকতার সাথেই কাজ করে যাচ্ছেন।অফিসার ইনচার্জ জনাব কাজী মাইনুল ইসলাম পিপিএম এর নেতৃত্বে 250 জন এর বিশাল পুলিশ ইউনিট অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় দিনরাত্রি নিরাপত্তামুলক দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন।

জনাব কাজী মাইনুল ইসলাম পিপিএম তার আওতাধীন অঞ্চলের মধ্যকার বিশেষায়িত অপরাধগুলো সম্পর্কে আলোকপাত করেন।সাভার মডেল থানা অঞ্চলের গুরুত্ব বিবেচনা করে ইতোমধ্যে থানার আভ্যান্তরীন পরিবেশও বৃদ্ধি করা হয়েছে, যাতে আগত সেবা প্রার্থীগণ তাদের প্রাপ্য সেবা গ্রহণে হয়রানি বা সমস্যার সম্মুখিন না হন।

২০১৫ সালে শীতাতপ নিয়ন্ত্রীত সম্মেলন কক্ষ নির্মাণ, ২০১৬ সালে অভ্যন্তরের ওয়াক ওয়ে নির্মাণ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, থানার গোলঘর নির্মানের মাধ্যমে থানার আভ্যান্তরিণ পরিবেশ বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা বাস্তবায়ন ও উদ্বোধন করেছিলেন জনাব হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার) পিপিএম। থানায় বসার স্থান, মুক্ত বাতাশ ও পরিছন্ন পরিবেশ থাকায় থানায় আগত সেবা প্রার্থীদের মানষিক বিষন্নতা একটু কম থাকে।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।