গ্রাম বাংলার প্রকৃতি, পাখির কলকাকলিতে মুখরিত সবুজ অরণ্য আর কলকারখানার খটখট শব্দে পোশাক শ্রমিকদের কোলাহলে পূর্ণ রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভারের জলাভূমি খ্যাত বিস্তীর্ণ প্রাচীন বাংলার জনপদ আশুলিয়া।
তুরাগ নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা জনপদ কিভাবে পরিচিতি পেলো আশুলিয়া নামে তার রয়েছে নানান মতবাদ। কেউ বলেন, এ অঞ্চলে ধামসোনা নামে এক রাজা বসবাস করতেন। তার ছেলে ও মেয়ের নাম ছিল যথাক্রমে আশু ও লিয়া। সেই রাজপুত্র ও রাজ কন্যার নামের যৌথ মিশ্রণই আজকের আশুলিয়া। তবে স্বীকৃত ভিন্নমতটি হলো, একদা আশু ও লিয়ার মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে তাদের সম্পর্কে বাধা হয়ে দাড়ায় উভয়ের পরিবার। ফলে আশু ও লিয়া এক সংগে স্থানীয় একটি বটগাছের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এই ঘটনা থেকেই দিনে দিনে আশুলিয়া নামের পরিচিতি লাভ করে বলে ধারণা পাওয়া যায়।
মাত্র দুই দশকে পোশাক শিল্পের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃত আশুলিয়া ৫ ডিসেম্বর ২০০৫ সালে উপজেলাধীন মানুষের প্রশাসনিক সুবিধার্থে সাভার মডেল থানা হতে পৃথক হয়ে শিমুলিয়া, ইয়ারপুর, পাথারিয়া, আশুলিয়া ও ধামসোনাসহ ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে একটি স্বাতন্ত্র্য থানা হিসেবে যাত্রা শুরু করে। যা ১৪৮.৬৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বেষ্টিত সাভার উপজেলাধীন একটি আধুনিক থানা অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
একসময় আশুলিয়া ছিলো কৃষি প্রধান অঞ্চল। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এসে শিল্প প্রধান অঞ্চলে রূপ লাভ করে। মাত্র দুই দশকের এই সমৃদ্ধি নিঃসন্দেহে আশুলিয়াকে প্রশংসিত করে। সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা, রাজধানীর সন্নিকটে অবস্থান আর ব্যবসায়ীদের নিশ্চিন্তে বিনিয়োগের মাধ্যমে আশুলিয়া অঞ্চল ঢাকা বিভাগের একটি অন্যতম বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে পরিণত হয়।এখানে উৎপাদিত পোশাক সোয়েটার, কম্বল, মাথার ক্যাপ, জার্সি, দুগ্ধজাত পণ্য, ইলেকট্রনিক্স, জুতা ও বাচ্চাদের খেলনা উৎপাদন ও রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতির মানদন্ডে উচ্চ ভূমিকা পালন করে আসছে।