মেঘনা ও কালিনদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিবেষ্টিত একটি জনপদ কুলিয়ারচর উপজেলা। মোঘলদের শাসন সময়ে কুলিয়ারচর অঞ্চলটি বাজিতপুর থানার অন্তরর্গত ছিল। জেমস রেনেল অংকিত অষ্টদশ শতাব্দির মানচিত্রে দেখা যায় কেবল কুলিয়ারচর থানার ফরিদপুরের উপস্থিতি।

কুলিয়ারচর নামকরণের ইতিহাস

ইতিহাস থেকে জানা যায়, মোগল আমলে এ এলাকাকায় কুলি খাঁ নামে এক প্রভাবশালী ব্যাক্তি ছিলেন। এসময় মেঘনা ও কালী নদীতে প্রাায়শই জলদস্যুরা ছোট বড় নৌ-যান গুলোর উপর হামলা করে সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যেত। উল্লেখ আছে,  কুলিখাঁর নেতৃত্বেই ঐ সব জলদস্যুদের পতন ঘটে এবং তার নামানুসারে কুলিখাঁর চর থেকে পরবর্তীতে কুলিয়ারচর নামে পরিচিতি লাভ করে। এবং অঞ্চলটি জনবসতির জন্য নিরাপদ হলে ধীরে ধীরে বসতি স্থাপন বাড়তে থাকে।তবে লোক মুখে জানা যায় কুলিয়াচর পূর্বে দেওয়ানগঞ্জ নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে কুলিখাঁ, তাঁতারখাঁ, আদমখাঁ, লোকমানখাঁ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের প্রতিষ্ঠা লাভের মাধ্যমে তাদের নামানুসারে বড়খাঁরচর, তাতাঁরকান্দি, আদমখাঁরকান্দি, লোকমানখাঁরকান্দি নামে পৃথক ভাবে একেকটি জনবসতি স্থান গড়ে ওঠে।

কুলিয়ারচরের অবস্থান

কুলিয়ারচর উপজেলা বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।এর উত্তরে বাজিতপুর উপজেলা, দক্ষিণে বেলাবো এবং ভৈরব উপজেলা; পূর্বে ভৈরব এবং বাজিতপুর উপজেলা ও পশ্চিমে কটিয়াদি এবং বেলাবো উপজেলা অবস্থিত।

কুলিয়ারচর উপজেলার গঠন

কালের বিবর্তনে, প্রয়োজনীতা দেখা দিলে, ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে কুলিয়ারচর এ প্রথমবারের মত একটি পুলিশ ফাড়ি স্থাপন করা হয় । পরবর্তী বছর ১৯২৩ সালে কুলিয়ারচর একটি পৃথক থানা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।এবং স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভের পর, ১৯৮৩ সালে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের আওতায় কুলিয়ারচর মানউন্নিত হয়ে উপজেলায় রুপান্তরিত হয়। পরে ১১.৩৮ বর্গ কি.মি. আয়তন নিয়ে কুলিয়াচর পৌরসভার স্বীকৃতি লাভ করে।বর্তমান কুলিয়াচর উপজেলার আয়তন ১০৪.১ বর্গ কি.মি.। মাত্র ৪৬টি মৌজায় বিভক্ত ১৩৩ গ্রামের সমন্বয়ে ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলা।

প্রাকৃতিক সম্পদে কুলিয়ারচর

সবুজ ও নীবিড় শান্ত পরিবেশের কুলিয়াচরের ভুমি, পলি বিধৌত উর্বর। তাই এ অঞ্চলে কৃষি জমিগুলো মৌসুমী ফসল উৎপাদনের জন্য খুবই উপযুক্ত। কুলিয়ারচর এর প্রাকৃতিক সম্পদ মাছ। মানুষের অন্যতম জীবিকা মাধ্যম মাছ চাষ। কুলিয়াচরে একটি বৃহৎ মাছের আড়ৎ রয়েছে এবং রয়েছে একটি অত্যাধুনিক মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রকল্প। মেঘনা নদীর মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান সহ বিদেশেও রপ্তানী হয়। এ উপজেলার মানুষের কর্মসংস্থানে মৎস্য ব্যবসার প্রসার ব্যপক ভূমিকা রেখেছে।

gif makerপ্রায় ২ লাখ মানুষের বসবাসের উপজেলা কুলিয়াচর ৩টি নদী বেষ্টিত দ্বীপ সাদৃশ্য অঞ্চল। নদীর তীরে সাড়ি সাড়ি দাড়িয়ে আছে ছোট ছোট ঘর, দালানসহ অসংখ্যা স্থাপনা।বলা হয় এ এলাকার মানুষ রাজনৈতিক ও ধর্মীও দিক থেকে পারস্পারিক শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রেখে সকল আচার অনুষ্ঠান ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে থাকে।কুলিয়ারচর উপজেলায় কোন বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলেও মোট ৯১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা কুলিয়াচর উপজেলার শিক্ষার মানদন্ডে দেখা যায় এখানকার প্রায় ৫৫ শতাংশ মানুষই শিক্ষিত।

কুলিয়ারচরে বসবাসরত মানুষের সুচিকিৎসা প্রদানে  এখানে রয়েছে ১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ ১০টি অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান।বহু সামাজিক প্রতিষ্ঠানসহ এখানে গড়ে উঠেছে ৯টি এনজিও সংস্থাসহ ১২টি ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প প্রতিষ্ঠান।তবে বর্তমানে এ উপজেলার মানুষের কর্মসংস্থানের একটি বড় সুযোগ হতে চলেছে বিভিন্ন খামারী ব্যবসা প্রসারের মাধ্যমে। সবচেয়ে বেশি এগিয়ে পোল্ট্রি খামার ব্যবসা। এখানে ৪০০টিরও অধীক পরিমাণ পোল্ট্রী খামার গড়ে উঠেছে উপজেলা জুড়ে।
উপজেলার উন্নয়নে অগ্রাধিকার পাচ্ছে এখানকার আঞ্চলিক সড়কগুলো। প্রায় সব এলাকা জুড়েই নির্মিত হয়েছে পিচ ঢালাই সড়ক পথ। কুলিয়ারচর হয়ে ঢাকা-কিশোরগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ,দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষ রেলপথে চলাচল করে।তাছারাও নৌ পথে প্রতিদিন নৌকা, ট্রলার, কার্গো, লঞ্চ, ষ্টীমার দিয়ে অষ্টগ্রাম উপজেলা, মিঠামইন উপজেলা ও ইটনা উপজেলায় যাতায়ত করে শতশত লোক।এছাড়া ও মৎস্য জাত পণ্য এই পথে আনা নেয়া করা হয়।উপজেলা জুড়েই রয়েছে বিভিন্ন বিল ও নদীর মোহনায় জেগে থাকা প্রকৃতির রূপ।

ভ্রমণ পিপাসু মানুষের জন্য দর্শনীয় স্থান

ফরিদপুর মাজার

হযরত আলী আক্তার শাহ কলন্দর হুজুর নামে পরিচিত। তিনি অনেক দিন কান্দুলিয়ায় অবস্থান করেন বলে কান্দুলিয়া হুজুর নামে পরিচিত। বর্তমানে কুলিয়ারচরের  ফরিদপুর ইউনিয়নে  তার মাজার শরীফ রয়েছে। প্রতি বছর উক্ত মাজারে দুইবার ওরশ হয়। এতে বহু ভক্তের আগমন ঘটে।

মহারাজ ত্রলৈোক্য নাথ চক্রর্বতীর বাড়ী

‘মহারাজ’ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী যিনি ব্রিটিশ শাসকদের ভিত কাঁপিয়ে দেয়া বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের প্রতীক। বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের কারণে অগ্নিযুগে যে কজন মানুষ ভারতবর্ষে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন, ব্রিটিশ শাসকদের ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী তাদের অন্যতম

নাজিরদিঘী পুকুর

উপজেলা সদর থেকে ৬ কিঃমিঃ দূরে উত্তর পুর্ব দিকে উছমানপুর ইউনিয়নে নাজিরদিঘী গ্রামে নাজিরদিঘী পুকুর অবস্থিত। পুকুরটির আয়তন ২২ একরের উর্ধেব। কথিত আছে কুচবংশীয় রাজা প্রজাদের পানীয় জলের সুবিধার্থে পুকুরটি খনন করেন।এখানে বসবাসরত, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী বা চাকুরীজিবিসহ সকল মানুষের নিকটতম সাহায্যকারী, কুলিয়াচর থানার একঝাক তরুণ পুলিশসদস্যগণ।যেকোন প্রয়োজনে, বিপদে বা নিরাপত্তা সহায়তায়, সব সময়ই পাশে থাকার প্রতিশ্রতি দিয়ে কাজ করে চলেছেন, এ থানায় বিভিন্নপদে দায়িত্বরত অফিসারসহ থানার সকল পুলিশ সদস্যগণ।এবং তাদের সর্বদা সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদানে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন থানার সর্বাধিক গুরুত্বসম্পন্ন একজন অভিভাবক।
অত্যান্ত পরিপাটি, সুমিষ্টভাষি ও মৃদুকণ্ঠের অধিকারী জনাব গোলাম মোস্তফা এর সততা, নিষ্ঠা ও কর্তব্য পরায়নতা নিঃসন্দেহ কুলিয়াচরবাসির জন্য আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী হয়ে থাকবে, কুলিয়াচর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত।
error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।