সবুজে বিস্তীর্ণ মাঠ, কৃষকের অবিরাম ছুটে চলা, গ্রাম বাংলার মন মাতানো মেঠোপথ সব মিলিয়ে কুমিল্লার লাকসাম থানা অঞ্চলটি যেন বঙ্গ প্রেমি কোনো এক শিল্পীর তুলিতে ফুটে ওঠা রূপসী বাংলার এক টুকরো জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। জনশ্রুতি রয়েছে, এ এলাকায় আবাসস্থল ছিল লাখ লাখ শামছ এর। অর্থাৎ সূর্য আওলীয় দরবেশদের বিচরন ছিল এই অঞ্চলটিতে। তাই লাখ লাখ শামছ থেকেই বিবৃত হয়ে এ এলাকাটি লাকসাম নামে পরিচিতি লাভ করে।
অবস্থানঃ
রাজধানি ঢাকা থেকে ১২৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং কুমিল্লা সদর থেকে মাত্র ২৯ কিঃ মিঃ দক্ষিণে ডাকাতিয়া নদীর তীরে অবস্থান শ্যামল বাংলার অকৃত্তিম রূপে সজ্জিত অঞ্চল লাকসাম। ১২৪ দশমিক সাত নয় বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ থানা অঞ্চলটিতে বসবাস করে আড়াই লক্ষাধিক মানুষ। ১৯৮২ সালে লাকসাম থানা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও পরবর্তী বছরেই একে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে এ অঞ্চলটিতে রয়েছে ১টি পৌরসভা এবং ৮টি ইউনিয়ন। ইউনিয়ন সমুহ হল বাকই, মুদাফফরগঞ্জ, দক্ষিন মুদাফফরগঞ্জ, কান্দিরপাড়, গবিন্দপুর, উত্তরদা, আজগরা ও পূর্ব লাকসাম।
মুক্তিযুদ্ধঃ
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এ অঞ্চলের প্রবীনদের স্মৃতিতে আজও গেঁথে রয়েছে মর্মান্তিক ইতিহাস। সেসময় পাকবাহিনি এ এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এপ্রিলের শুরুর দিকে আজগরা বাজারে হানাদারদের হামালায় প্রায় ২০০ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয়। এরপর কুমিল্লা এয়ারপোর্ট প্রতিরোধ, চুনাতি, চিতোষী, হাড়াতলী, আলীশ্বর প্রভৃতি স্থানে মুক্তিবাহিনীর সাথে পাকবাহিনীর একাধিক সম্মুখ সমরে শহিদ হন বহু মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের প্রাণপণ যুদ্ধে ১৯৭১ সালের ১২ই ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় পুরো লাকসাম। মুক্তিযোদ্ধাদের এসব আত্বত্যাগের নিদর্শন স্বরূপ এলাকায় রয়েছে একাধিক গনকবর ও স্মৃতিস্তম্ভ।
শিক্ষাঃ
স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই শিক্ষার মানোন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে লাকসাম থানা অঞ্চলে। ফলে, বর্তমানে শিক্ষার হার ৫১.৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। রয়েছে মোট ৪টি কলেজ, ১টি কারিগরি কলেজ , ৭০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫০৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ও ৬০টি মাদ্রাসা। এছাড়া শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলা ও শরীর চর্চায় মনোনিবেশের জন্য এখানে স্থাপন করা হয়েছে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম।
যোগাযোগঃ
বর্তমান সময়ে আইন শৃঙ্খলার সার্বিক স্থিতিশীলতার ফল স্বরুপ এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যাবস্থায় এসেছে দৃশ্যমান উন্নয়ন। বৃটিশদের স্থাপিত বিখ্যাত লাকসাম জংশন দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে দেশের বিভিন্ন স্থান অভিমুখী ট্রেন। রয়েছে, উপজেলা ভিত্তিক অভ্যন্তরীণ সড়ক। এছাড়া কুমিল্লা – নোয়াখালী এবং কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের কল্যানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটে সহ সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে।
তবে যোগাযোগের এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু চক্র মাদক চোরাচালান ও চুরি সহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করে থাকে। চট্রগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি নুরেআলম মিনা যোগদানের পর পরই মাদক চোরাচালান সহ সকল ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার অবস্থান গ্রহন করে আসছেন। তারই কার্যকরী নেতৃত্বে, কুমিল্লা জেলার কর্তব্যপরায়ণ পুলিশ সুপার জেলাবাসীর আইনি নিরাপত্তা নিশ্চিতে যুগোপযোগী ও কার্যকরী কর্মপরিকল্পনা গ্রহন করেছেন। সে লক্ষেই, লাকসাম সার্কেলের আওতাধীন পুলিশ সদস্যগণ নিষ্ঠার সাথে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।
অর্থনীতিঃ
লাকসাম থানা পুলিশের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় এলাকার মানুষ নির্বিঘ্নে তাঁদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পরিচালনা করে আসছে। এ অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ কৃষির সাথে উতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। তাঁদের অর্থকরী ফসল উৎপাদনের বাইরেও একটি বিশেষ অংশ ব্যবসা, যোগাযোগ ও শিল্প খাতে নিযুক্ত রয়েছে। পৌর এলাকাসহ এ থানা অঞ্চলে প্রায় ২৫টিরও বেশী হাটবাজার রয়েছে। গড়ে উঠেছে বেশ কিছু শিল্প-কারখানা।
স্বাস্থ্যঃ
লাকসাম বাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে নির্মিত হয়েছে লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। রয়েছে ১টি মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৪টি ইউনিয়ন ভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিকসহ ৮টি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
দর্শনীয় স্থানঃ
ঐতিহাসিক বিবেচনায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ স্থান কুমিল্লার লাকসাম। এখানে রয়েছে ঐতিহাসিক মৈশান বাড়ি, জগন্নাথ বাড়ি, মুক্তকেশী কালিবাড়ি এবং উপমহাদেশের একমাত্র নারী নবাব মুসলিম জমিদার ফয়জুন্নেসার আবাসস্থল, নবাব ফয়জুন্নেসা হাউজ। যেটিকে বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক জাদুঘরের রুপ দান করা হয়েছে। এছাড়াও এখানে রয়েছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত মসজিদ যার অদুরেই অবস্থিত তাঁর সমাধি সৌধ। ইসলামিক বহু আউলিয়া ও দরবেশের অবাধ বিচরন ছিল এই পুণ্য ভূমিতে। যার সাক্ষী বহন করছে এখানে অবস্থিত মোল্লা কাজিমুদ্দিনের মাজার শরীফ, বিভিন্ন ঐতিহাসিক মসজিদ ও ধর্মীয় স্থাপনা।
প্রেসক্লাবঃ
লাকসামে রয়েছে সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন লাকসাম প্রেসক্লাব। রয়েছে কিছু স্থানীয় অনলাইন মাধ্যম।